কলকাতা: 'শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় আহত ছাত্র',যাদবপুরকাণ্ডে ইতিমধ্যেই ৩ দিন পার। হাইকোর্টের তীব্র ভর্ৎসনা। বামেদের তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছে শাসক নেতা দেবাংশুরা। বিতর্কের শেষ নেই। প্রকৃত কী ঘটেছিল, তা বোঝাতে, গতকয়েকদিনে সাংবাদিক সম্মেলন করে, তোলা হয়েছে ফ্রেমের পর ফ্রেম। অবশেষে ৪ দিনের মাথায়, গাড়ির চালক-সহ ব্রাত্য বসু, ওমপ্রকাশ মিশ্রের বিরুদ্ধে  ইন্দ্রানুজের অভিযোগের ভিত্তিতে, যাদবপুর থানায় FIR দায়ের করা হয়েছে।

Continues below advertisement

ঘটনার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত ছাত্র  ইন্দ্রানুজ রায় বলেছিলেন, 'আমরা গাড়ির সামনে বসলাম, স্যর দাঁড়ান আমরা কথা বলব। ওই অবস্থায় গাড়ি স্টার্ট করে এগনো শুরু করে। তখন পিকআপ বাড়তে থাকে তখন আমরা যেহেতু সরতে পারছিলাম না পিছন দিকে দৌঁড় শুরু করি। তখন আমরা করি যে গাড়িটাকে আমরা ধরব...কিন্তু তখন আরও স্পিড বাড়িয়ে দেন। তখন ছিটকে পড়ি। এবং মাথাটা যাতে চাকাতে না যায় তখন হচ্ছে আমি মাথাটা ঘুরিয়ে নিই, এবং তাতেই চোখের উপর দিয়ে চাকাটা চলে যায় বা পায়ের চেটোর উপর দিয়ে চাকাটা যায়।' যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন দেবাংশু।

Continues below advertisement

তৃণমূল কংগ্রেসের আইটি সেলের প্রধান  দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেছিলেন, চোখের ওপর থেকে টায়ার চলে গেলে, মাথা তো থেঁতো হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু, শুধু চোখে চোট লেগেছে। আহত ছাত্র ইন্দ্রানুজ রায়ের মা বর্ণালী রায় বসু বলেছিলেন, ওটা গাড়ির খুব ভারী ধাক্কায় থেঁতলে গেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ে, শিক্ষামন্ত্রীর গাড়িতে পিষ্ট হয়ে, ছাত্রের আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে!চোখে আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ইংরেজি অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইন্দ্রানুজ রায়। এই পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই আহত ছাত্রের পরিবারকে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য় বসু। 

কিন্তু উল্টোদিকে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি চাপার অভিযোগ খারিজ করতে, মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল।  স্কুটার-তত্ত্ব তোলার পর,  আহত ছাত্রের আঘাতের ধরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তারা। দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেছিলেন, যদি চোখের ওপর দিয়ে টায়ার যেতে হয়, স্বাভাবিক বুদ্ধিতে যেটা বলে, আমাদের চোখকে টায়ারকে টাচ করতে হলে, তার আগে কমপক্ষে নাকের হাড়, কপালের হাড় এবং গালের এই উঁচু অংশের হাড়কে ভাঙতেই হয়। কারণ চোখ এই তিনটের মাঝখানে অবস্থিত। কিন্তু, তাঁর কি নাকের হাড় ভেঙেছে? কপালের হাড় ভেঙেছে? গালের হাড় ভেঙেছে? না।... তার মানে চোখের ওপর দিয়ে টায়ার যাওয়ারও গল্প সত্য় নয়। বডির ওপর থেকে গাড়ি যাওয়ারও গল্প সত্য় নয়।' 

আরও পড়ুন, RG কর-কাণ্ডে এবার চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ CBI-র, সেমিনার রুমে 'প্রথম' অভয়ার মৃতদেহ দেখেছিলেন তিনিই !

অপরদিকে গোটা ঘটনার পর, ব্রাত্য বসু বলেছিলেন,' যাদবপুর প্রায় মুক্তাঞ্চলে পরিণত করার চেষ্টা। আমি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছিলাম, চেয়েছিলাম ডেপুটেশন জমা দিক, ওরা দিতে রাজি হল না। ৩০-৪০ জনের একটা গ্যাং ছিল, ওদের চিনি না। এসএফআইয়ের ডেপুটেশন দিয়েছিল, ৪-৫টি অতিবাম কয়েকটি সংগঠন ছিল, তাঁরা বলছিল সবার সঙ্গে একসঙ্গে বসে ডেপুটেশন দিতে হবে, সেটা সম্ভব ছিল না। ওরা শারীরিকভাবে হেনস্থা করতে চাইছিল, টানা অধ্যাপকদের মারধর করেছে। ছাত্র হয়ে অধ্যাপকদের মারছে, এটা দুর্ভাগ্যের। আমার গাড়িতে একজন ছাত্র আহত হয়েছে, সেটা অবশ্যই দুঃখের। কিন্তু এতজন অধ্যাপকদের শারীরিকভাবে হেনস্থা, সেটা কোন রুচি বা সংস্কৃতি থেকে আসছে, আমি বিস্মিত। যাঁরা ওখানে নিয়মিত পড়াশোনা করতে চাইছেন সেই পড়ুয়াদের জন্য বিপজ্জনক। ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে চাই, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। মার্চ বা এপ্রিল মাসে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতেই পারতাম। এসএফআইয়ের ছাত্র মানে বিরোধী মনে করি না। বিকাশ ভবনে যখন সময় দিতে চাইলাম এসএফআইকে, তখন তাঁরা রাজি হলেন না। নির্বাচনের তারিখ জানতে চাওয়া উদ্দেশ্য ছিল নাকি গন্ডগোল করাই লক্ষ্য ছিল?' প্রশ্ন তুলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।