হিন্দোল দে, ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : মৃত্য়ুর আগে পরিবারের কাছে কীসের ভয়ের কথা জানিয়েছিলেন স্বপ্নদীপ? র‍্যাগিংই কি অকালে কেড়ে নিল তরতাজা একটা প্রাণ?  এই প্রশ্নগুলোই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।  ব়্যাগিং হয়েছে, হস্টেলে ব়্যাগিং দীর্ঘদিনের একটা প্র্যাকটিস, বলছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া রাজদীপ পাঁজা। তাঁর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পড়ুয়াই স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর মুখ খুলেছেন ব়্যাগিং নিয়ে।


'স্নাতকস্তরে প্রথম বছরে ভর্তি হই। প্রথম ৭ টা দিন ভয়াবহ কেটেছিল। আমি বাবাকে ফোন করে বলতাম, আমি এখানে পড়ব না, আমি এখানে থাকতে চাইছি না। তারপর আমি হস্টেল থেকে বেরিয়ে যাই।' স্বপ্নদীপের মৃত্যুর বিচার চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে হাঁটা এক ছাত্রর মুখে শোনা গেল এই কথা। 


যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া অর্পণ মাঝি। তিনিও ফেসবুকে সরব হয়েছেন। লিখেছেন'আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমার পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা একটি পরিবার এবং আমি আসানসোলে বড় হয়েছি। স্বাভাবিক ভাবেই আমি ভর্তির সময় হস্টেল অ্যাপ্লাই করেছিলাম। জীবনে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার পর দুই তিন রাত হস্টেল আমার কাছে বিভীষিকার জন্ম দিয়েছে। আমি এখন অনেক কষ্ট করেই, ধার নিয়ে হলেও মেস খুঁজছি' 

তিনি আরও লিখেছেন, 'সমাজের প্রতিটি স্তরে ক্ষমতা প্রদর্শন আছে, কিন্তু যাদবপুর মেইন হস্টেলের কিছু দাদা'ও যে এই একই কাজ করবে তা আমার কল্পনার অতীত। আমি ভীত। '

এবিপি আনন্দর মুখোমুখি হয়েও শোনালেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। জানালেন তিন দিন ছিলেন হস্টেলে। নিয়ম ছিল মাথার চুল এত ছোট কে কাটতে হবে যে, ধরা যাবে না। ক্লিন শেভড থাকতে হবে। ফুল প্যান্ট পরে থাকতে হবে সব সময়। এছাড়াও তার ঝুলিতে রয়েছে ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার কথা।  

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক পড়ুয়া বলছেন, সিনিয়র-জুনিয়রদের ইন্ট্রোর নাম করে ব়্যাগিংটা নর্মালাইজ করা হয়, এরকম ভাবে যে পরে যখন তুমি সেকেন্ড ইয়ারে যাবে , তুমিও করে নিও !


মাত্র দিন তিনেক যাদবপুরের মেন হস্টেলে এসে এমন মর্মান্তিক পরিণতি কেন হল স্বপ্নদীপের? মৃত্যুর দিন ফোন করে মা-বাবাকে বলেছিলেন তিনি ভাল নেই। স্বপ্ন দেখতেন স্বপ্নদীপ! আর যাই হোক স্বপ্নের উড়ান ছিল যাঁর চোখে সে কখনও আত্মহত্য়া করতে পারে না ! মেনে নিচ্ছেন তাঁর সহপাঠী সহ অনেকে। মা-বাবার দৃঢ় বিশ্বাস ভালবেসে যাদবপুরে বাংলা পড়তে গিয়েছিল যে ছেলে, সে আত্মহত্যা করতেই পারে না। তাহলে তাঁর এই অকাল পরিণতি হল কেন?