সুজিত মণ্ডল ও সমীরণ পাল, কলকাতা: সাত দিন আগেই ভর্তি হয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur University)। তিন দিন ক্লাসও করেছেন। তারপরই নিভে গেছে স্বপ্ন-দীপ। তাঁর বগুলার বাড়িতে এখন শুধুই অন্ধকার। হাহাকার অবস্থা বাবা-মা-পরিজনদের। অ্যালবাম উল্টে ছেলের ছোটবেলার ছবি দেখে ডুকরে কেঁদে উঠছেন মা স্বপ্না কুণ্ডু, চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডুও। (Swapnadeep Kundu )


ছেলেকে হারিয়ে রামপ্রসাদবাবুর প্রতিক্রিয়া, "যাদবপুর না যমপুর।" কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে মা স্বপ্নাদেবীর। বলেন, "কত কষ্ট করে মানুষ করেছিলাম...।" স্বপ্নদীপের চলে যাওযার খবরে বাড়িতে এসে সহানুভূতি জানিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু তরতাজা ছেলের চলে যাওয়ায় কোনও ভাবেই সান্ত্বনা পাচ্ছেন না রামপ্রসাদবাবু এবং স্বপ্নাদেবী। এত লড়াই, এত কষ্টের পর এই লেখা ছিল, মানতে পারছেন না তাঁরা। (Kolkata News)


নদিয়ার বগুলা থেকে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। একরাশ আশা বুকে নিয়ে স্বপ্নের উড়ানে পাড়ি দিয়েছিলেন স্বপ্নদীপ কুণ্ডু। কিন্তু সে স্বপ্ন যে অকালে চুরমার হয়ে যাবে তা বুঝে উঠতে পারেননি কেউই। বগুলা হাইস্কুলের ছাত্র স্বপ্নদীপ, ডাক নাম গোপাল। শিক্ষক, সহপাঠীরা বলছেন, তিনি বরাবরই মেধাবী, বিদ্যাসাগরের গোপালের মতোই সুবোধ। 


স্বপ্নদীপের গৃহশিক্ষক মামণ মণ্ডল বলেন, "লাখে এমন একটা ছেলে পাওয়া যায়। আমি ভেঙে পড়লে ও আশা জোগাত। বাংলায় প্রচুর জ্ঞান। মেনে নিতে পারছি না। এত ভাল ছেলে এভাবে চলে যাবে!"


আরও পড়ুন: JU Student Death: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের রহস্যমৃত্যু, গ্রেফতার এক প্রাক্তন পড়ুয়া

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন স্বপ্নদীপ। কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়লেও বাংলার প্রতি ছিল গভীর টান। তাই প্রথমে বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে ভর্তি হলেও, যাদবপুরে বাংলা পড়ার সুযোগ পেয়ে আর দ্বিতীয় বার ভাবেননি।

ক্যুইজ থেকে শুরু করে প্রবন্ধ লেখা, সবেতেই স্বপ্নদীপের মেধার ছাপ পাওয়া যায়। পেয়েছেন অনেক পুরস্কারও। স্বপ্নদীপের বাবা বলেন, "সবাই ফোন করে কাঁদছেন। বলছেন, স্বপ্নদীপের মতো ছেলে লাখে হয় না। আমি এখন কী নিয়ে থাকব? কত লেখালেখি করত। ক্যুইজে কত পুরস্কার পেত। কত উৎসাহ ছিল ওর..."

স্বপ্নদীপের বাবা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে কাজ করেন। আর মা আশা কর্মী। ছেলেকে কলকাতার অভিজাত বিশ্ববিদ্য়ালয়ে পড়তে পাঠিয়েছিলেন অনেক আশা নিয়ে। কিন্তু মাত্র তিনটে দিন কাটতে না কাটতেই সব শেষ। হা হুতাশ করে মা বলেন, "আজ আনতে যাওয়ার কথা ছিল। সব শেষ হয়ে গেল।"


স্বপ্নদীপের বাবা সাধ করে নিজের হাতে গড়া বাড়ির নাম দিয়েছিলেন মায়ের আঁচল। সেখানে আজ শুধুই সন্তান শোকের হাহাকার।  বুক ফাটা কান্না। স্নেহের আঁচল বিছিয়ে বসে আছেন মা। ইতিমধ্যেই স্বপ্নদীপের বাড়িতে ফোন করে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ছেলে যে আর ফিরবে না, মানতে পারছেন না স্বপ্নদীপের মা-বাবা।