কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, সমীরণ পাল, কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পডুয়ার রহস্যমৃত্যুতে সামনে এসেছে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট। যেখানে লেখা রয়েছে, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ইংরেজি অনার্সের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডলের। এই আবহে সামনে এসেছে একটি চিঠি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো এই চিঠিতে পরিষ্কার লেখা,বিকেল ৪টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের অনুমতি রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, রাত ৮টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের অনুমতি থাকলে, তারপরও ক্যাম্পাসে কী করছিলেন পড়ুয়ারা? অত রাতে ঝিলের কাছেই বা কেন গেছিলেন অনামিকা? সব মিলিয়ে পড়ুয়া মৃত্যুতে একরাশ ধোঁয়াশা।
ফের যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ক্য়াম্পাসে রহস্য় মৃত্যু! অকালে নষ্ট হল আরও একটা সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। কিন্তু, কার গাফিলতিতে মৃত্যু হল ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া অনামিকা মণ্ডলের? অত রাতে ঝিলের কাছে কেনই বা গেছিলেন তিনি? সঙ্গে কি কেউ ছিলেন? প্রশ্ন বহু। কিন্তু উত্তর নেই। এই পরিস্থিতিতে, সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছে মৃত ছাত্রীর পরিবার।
মৃত পড়ুয়ার দাদু অজয় সরকার বলেন, এটা কি যাদবপুর প্রতিষ্ঠান কি একটু সক্রিয় হলে কি এগুলো বন্ধ করতে পারে না? ক্যাম্পাসের মধ্যে হচ্ছে তো। গাফিলতিটা কার? প্রশ্নের উত্তরে অজয় সরকার, মৃত পড়ুয়ার দাদু বলেন, গাফিলতিটা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের। নিরাপত্তাটা কোথায়? একটা অনুষ্ঠানের মধ্যে নজর রাখা উচিত।'যাদবপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেট থেকে দু'পা হাঁটলেই বাঁ দিকে পিজি আর্টস বিল্ডিং এবং ডান দিকে আর্টস ফ্যাকাল্টির ইউনিয়ন রুম। তার ঠিক পাশেই ঝিলপাড়।মাঝখানে চলে গেছে ছোট্ট এই গলি.. বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর,বৃহস্পতিবার, এই পিজি আর্টস বিল্ডিং সংলগ্ন পার্কিং লটেই চলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রামা ক্লাবের তরফে একটি অনুষ্ঠান। নাম 'রুহানিয়ত'অনামিকা মণ্ডলও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। রাত দশটা নাগাদ ইউনিয়ম রুম সংলগ্ন ঝিল থেকেই উদ্ধার হয় অনামিকার অচৈতন্য দেহ। আর এই আবহেই হাতে এসেছে একটি চিঠি। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো এই অনুমতিপত্রে দেখা যাচ্ছে,মোট ৩ দিনের জন্য, পার্কিং লটে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। বিকেল ৪টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অনুমতিও চাওয়া হয় এই চিঠিতে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে,রাত ৮টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের অনুমতি ছিল, কিন্তু তারপরও কী করছিলেন পড়ুয়ারা? অত রাতে ঝিলের কাছে কেনই বা গেছিলেন অনামিকা?মৃত পড়ুয়ার দাদু অজয় সরকার বলেন, ও তো গানবাজনা করে। ও(অনামিকা মণ্ডল) তো অনুষ্ঠানে গানও গেয়েছিল শুনলাম। কালকে। তারপরে ওরা সব বসে, একসঙ্গে সব বসে সব বনধুরা একসঙ্গে বসে ছাত্রীরা। আরও ৫-৬ জন ছাত্র-ছাত্রীরা একসঙ্গে পুকুরপাড়ে বসে একটু গসিপিং করছিল। তার মধ্যে যে কী...বলছে নাকি পুকুরে পড়েছে। কীভাবে পড়েছে, কী করেছে. রহস্য তো স্বাভাবিক একটা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের সিকিউরিটি ইনচার্জ মুকুলচন্দ্র দাস বলেন, প্রোগ্রামের ভিতরেই ছিলেন এবং প্রোগ্রামের ভিতরে থেকে কে কখন যেটা ছিল, ওখানে তো দেখলাম একটা বাথরুম আছে এবং ওখানে শুধু একটা লেডিস টয়লেট। ওখানে তো আর আমরা যাই না। ওখানে তো সচরাচর আমরা ঢুকি না। এবং অত রাতে আমাদের মহিলা নিরাপত্তারক্ষীও থাকেন না। আর্টস বিল্ডিংয় সংলগ্ন পার্কিং লট থেকে ঝিলপাড় ও ইউনিয়ন রুমের মাঝের গলিতে কীভাবে গেলেন ওই পড়ুয়া? ঝিলেই বা পড়ে গেলেন কীভাবে? গোটা ঘটনায় উঠছে প্রশ্ন।মৃত পড়ুয়ার প্রতিবেশী বলেন,ওকে কেউ ডেকে কিছু করে ফেলেছে। কোনও ছেলে বন্ধু টন্ধু হয়তো ওকে কিছু অফার..বলেছে হয়তো রাখতে পারেনি কথাটা। ওকে হয়তো সেই করে...।'
ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পাড়ায় নামডাক অনামিকার..বাড়িতে অসুস্থ মা..। পড়াশোনার পাশাপাশি সমান তালে টিউশন পড়াতেন তিনি। মৃত পড়ুয়ার প্রতিবেশী পুষ্পিতা ভট্টাচার্য বলেন, ও বেরতোই না। পড়া নিয়েই থাকত। রেজাল্ট খুব ভাল করেছে। এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। ওর মার তো ব্রেনস্ট্রোক হয়েছে কিছু দিন আগে। খুবই অসুস্থ ওর মা।পুলিশ সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে ইংরেজি অনার্সের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডলের।বাইরে থেকে শরীরে কোনও গুরুতর আঘাতের চিহ্ণ পাওয়া যায়নি।ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে দেহ।