ব্যারাকপুর: বিধানসভা নির্বাচনে এখনও এক বছর বাকি। তার আগে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল জগদ্দল। জগদ্দল বাজারে বেলাগাম তাণ্ডব চালাল দুষ্কৃতীরা। দিনে-দুপুরে দেদার বোমাবাজি চলল। গতকাল রাতে গুলিও চলে এলাকায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছেন এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহই গুলি চালিয়েছেন। সেই নিয়ে অর্জুনকে দু'-দু'টি নোটিস পাঠিয়েছে পুলিশ। কিন্তু থানায় যাচ্ছেন না, সরাসরি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন অর্জুন। (Arjun Singh)
গতকাল রাত থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে জগদ্দল। অর্জুনের বাড়ির সামনে গুলি-বোমাবাজির পর, আজ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জগদ্দল বাজার। রাত থেকে পুলিশ পিকেটিং রয়েছে এলাকায়। তার পরও দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। এক জুটমিল শ্রমিকের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয় বলে জানা গিয়েছে। পুলিশের সামনেই দুষ্কৃতীরা বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। (Jagaddal Clash)
কানাই চৌধুরী নামের যে শ্রমিকের বাড়ির চালে বোমা পড়ে, তিনি বলেন, "যত বোমাবাজি এখানেই হয়, আর কোথাও হয় না। কী করব বুঝতে পারছি না। আমরা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ বোমা চলল। আতঙ্কে রয়েছি। এখানে থাকতেই মন চাইছে না।" বাড়ির মহিলা সদস্য বলেন, "পুলিশ থেকেি বা কী হচ্ছে। রাত থেকে চলছে। ঘরে ঢুকতে পারছি না। এখনও কাঁপছি।" বোমার আঘাতে টালির চালের কিছুটা ফাঁকা হয়ে গিয়েছে, জিনিসপত্র সব পড়ে গিয়েছে বলে জানান এক মহিলা বাসিন্দা। দেওয়ালে ফাটল ধরেছে বলে জানান। তিনি বলেন, ""
বুধবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জগদ্দলের মেঘনাদ জুটমিল চত্বর। অর্জুনের বাড়ির সামনেও গুলি-বোমা ছোড়ার ঘটনা সামনে আসে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি গুলির খোল উদ্ধার হয়েছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তিকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ব্যক্তি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। অর্জুন গুলি চালিয়েছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন আহত ব্যক্তি। অর্জুনকে সেই নিয়ে দু'টি নোটিস পাঠানো হয়েছে অর্জুনকে। কিন্তু থানায় যাবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। হাইকোর্টে আবেদন করছেন বলে জানিয়েছেন। এই ঘটনায় দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মারধর ও গুলি চলার ঘটনায় দু'টি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে।
কিন্তু কে গুলি চালাল, কে বোমা ছুড়ল তা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। অর্জুনের কথায়, "আজই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছি। দ্বিতীয় নোটিস পাঠিয়ে ২টোয় হাজির হতে বলা হয়। বুঝতেই পারছেন দলদাস পুলিশ কী ভাবে কাজ করছে।" কিন্তু অর্জুন নিজে গুলি চালিয়েছেন, ৫-৭ রাউন্ড গুলি চালিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের সোমনাথ শ্যাম। তাঁর দাবি, সিসিটিভি ক্যামেরার থেকে মুখ আড়াল করে গুলি চালিয়েছেন অর্জুন। কিন্তু অর্জুনের বক্তব্য, "যে বলছে ভুল বলছে। ক্যামেরা আড়াল করে গুলি চালানো যায়! ভুল এফআইআর। আমি যখন পৌঁছই সব পালিয়ে গিয়েছিল। পালানোর সময় গুলি চালাচ্ছিল। এই হল ঘটনা। এফআইআর-এ বলা হয়েছে, অর্জুন সিংহের সঙ্গে ২০-২৫ জন এসেছিল, তারা গুলি চালিয়েছে। তাহলেই বুঝুন।"
কিন্তু জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ জানিয়েছেন, অর্জুনই গুলি চালিয়েছেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। অর্জুন নাটক করছেন। সোমনাথ বলেন, "সিসিটিভিতে পুরোপুরি রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন পেয়েছে সেটি। আমার হাতে নেই। দেখা গিয়েছে, অর্জুনের পাশে একজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। সে আগ্নেয়াস্ত্রটি অর্জুনের হাতে দিচ্ছি। তার পরই গুলি চলে। সেই গুলিতেই সাদ্দাম আহত হয়। সাদ্দামের গুলি লেগেছে। মিলের ভিতর যাঁরা আটকে গিয়েছিলেন, তাঁরাও অর্জুনকে গুলি চালাতে দেখেছেন। সিসিটিভিতে মুখ এসে গিয়েছে বলেই এসব কথা বলে বিষয়টিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। গুলিটিকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ৭mm, না কি ৯mm। অর্জুনের পকেট থেকে বেরোল আগ্নেয়াস্ত্র, না কি কেউ দিল, সেটা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।"