রাজা চট্টোপাধ্যায়, রাজীব চৌধুরী, ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, জলপাইগুড়িদশমীর রাতে দুর্যোগ! বিসর্জনে বিভীষিকা। প্রতিমার সঙ্গে প্রাণের বিসর্জন! প্রাণ কাড়ল হড়পা বান! চোখের নিমেষে, আনন্দ বদলে গেল হাহাকারে। বিসর্জন দেখতে এসে, জলপাইগুড়ির মাল নদীতে হড়পা বানে ভেসে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় এক শিশু-সহ ৮ জনের। একসঙ্গে এতগুলো প্রাণহানির দায় কার? আদৌ কি সতর্ক ছিল প্রশাসন? মর্মান্তিক ঘটনার পর বিভিন্ন মহলে জোরাল হচ্ছে এই প্রশ্নগুলো। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে দাবি, দুর্ঘটনার মোকাবিলায়, বিসর্জনের সময় ঘাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী প্রস্তুত রাখতে হয়।


তাছাড়াও রাখতে হয় নৌকা, লাইফ জ্যাকেট। জোয়ার-ভাটার সময় অনবরত ঘোষণা করতে হয়। মাইকে প্রচার করতে হয়  । নির্দিষ্ট গাইডলাইন জানিয়ে ব্যানার টাঙাতে হয়। কিন্তু, বুধবার মাল নদীতে বিসর্জনের সময় কি এইসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল? তা নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ও আধিকারিকরা। 


বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক কর্মী জানান, 'আমাদের কর্মী কম ছিল, যেহেতু সব জায়গায় বিসর্জন হচ্ছে, তাই ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল এবং এখানে কর্মীর অভাব।' 


এখানেই প্রশ্ন উঠছে, 



  • কয়েক হাজার মানুষের ভিড় সামাল দিতে মাত্র ৮ জন সিভিল ডিফেন্স কর্মী কেন?

  • নৌকা, সরঞ্জাম না রেখে সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের হাতে শুধু দড়ি কেন?

  • আগেকার হড়পা বানের কথা মাথায় রেখে প্রশাসন সতর্ক হয়নি কেন?

  • উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস সত্ত্বেও কেন নেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি?

  • নদীখাতে কেন রাখা হয়নি পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা?


পুলিশ সুপার ( জলপাইগুড়ি ) দেবর্ষি দত্তের দাবি, 'আমাদের যথাযথ ব্যবস্থা ছিল। পুলিশ ও সিভিল ছিল, এসডিও ছিলেন, পুরসভার কর্মী ৫০-এর বেশি ছিলেন। মেডিক্যাল টিম ছিল। ভাসান শুরুর সময় হাঁটুর নীচে জল ছিল। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হঠাৎ বান আসে। কিছু লোক ভেসে যান। সেই সময় ঘাটে অন্তত ১ হাজার লোক ছিলেন। যারা ভেসে যান, স্পটেই ২০-২৫-জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।' 
তিনি আরও বলেন, ' বহুবছর ধরে বিসর্জন, শেষ ২০ বছরে এরকম ঘটনা ঘটেনি। ভাসান শুরুর সময় হাঁটুর নীচে জল ছিল। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হঠাৎ বান আসে। কিছু লোক ভেসে যান। সেই সময় ঘাটে অন্তত ১ হাজার লোক ছিলেন। যারা ভেসে যান, স্পটেই ২০-২৫-জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ১৩ জন ভর্তি, বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ৮ জন মারা গেছে, মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।'


জলপাইগুড়িকাণ্ডে ট্যুইটে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি ট্যুইটে লেখেন, জলপাইগুড়িকাণ্ডের পর ১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক যে, মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দফতর এই ইসুতে এখনও নিদ্রায়। কতজন নিখোঁজ, তা এখনও পরিষ্কার নয়। মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ, তিনি জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিন যাতে, নিখোঁজদের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয়।  


চাপানউতোর চলছে। কিন্তু, আটটা প্রাণ যে বেঘোরে চলে গেল, তার দায় কে নেবে? সেই উত্তর নেই কারও কাছে। 


রাজ্য সরকারের তরফে দু’টি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।



  • 03561230780

  • এবং 9073936815