রাজা চট্টোপাধ্যায়, (জলপাইগুড়ি) : কারখানা (industry) লক্ষ্য করে ছোড়া হচ্ছে একের পর এক পাথর। এক একটা পাথর উড়ে এসে পড়ছে আর ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে কাচের জানালা। জলপাইগুড়ির (jalpaiguri) রাজগঞ্জে (rajgung) মগরসুব্বা শিল্পতালুকে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের অভিযোগ। হামলার ভিডিও ফুটেজ জমা দিয়ে থানায় অভিযোগ কারখানা কর্তৃপক্ষের। ব্যবসায়ী সূত্রে খবর, একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ (police)। হামলার নিন্দা করে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছে নর্থ বেঙ্গল ইন্ড্রাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (north bengal industries association)। প্রসঙ্গত, ৪ বছর আগে রাজগঞ্জ ব্লকের আমবাড়ি শিল্পতালুকে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার মগরসুব্বা শিল্পতালুকে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য।
ঠিক কী হয়েছে
এই শিল্পতালুকেই রয়েছে শক্তি স্টিল কারখানা। সেখানেই দুষ্কৃতী হামলার অভিযোগে সরব হয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। সবই পাথর ছুড়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে কাচের ভাঙা টুকরো। সঙ্গে বড় বড় পাথর। কারখানার পক্ষ থেকে দেওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একাধিক দৃষ্কৃতী জড়ো হয়ে লাগাতার একের পর এক পাথর ছুড়ে চলেছে কারখানা লক্ষ্য করে। শক্তি স্টিল কারখানার কর্মী ও ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, চারজন ছেলে প্রথমে মদ খায় বাইরে। এসে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। অনেকেই ছিল। আমরা ৪-৫ জনকে দেখেছি। দুঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায়। রাতে থাকতে ভয় লাগছে। আবার আসতে পারে যে কোনও সময়। হামলার এই ভিডিও জমা দিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
শিল্প ভাবমূর্তিতে ধাক্কা ?
শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানই যে তাঁর সরকারের পাখির চোখ, তৃতীয়বার নবান্নে ফেরার পর তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চলতি মাসেই বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হওয়ার কথা। তার আগে রাজগঞ্জের শিল্পতালুকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীমহলে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। মগরসুব্বা শিল্পতালুকের ট্যাঙ্ক কারখানার মালিক নরেশ আগারওয়াল বলেছেন, 'এখন ফ্যাক্টরি মালিকরা আতঙ্কে। ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে শিল্প করবে কি না। মাঝে মাঝেই দেখা যাচ্ছে ইট চুরি হচ্ছে। মদ খাচ্ছে, ড্রাগস নিচ্ছে। কেউ আসতে চাইবে না।'
মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ নর্থ বেঙ্গল ইন্ড্রাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন
হামলার নিন্দা করে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছে নর্থ বেঙ্গল ইন্ড্রাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থার সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলেছেন, এরা কারা? এর পিছনে কারা আছে? এদের মাস্টারমাইন্ড কে? দু'কিলো ওজনের পাথর ছুড়েছে। বাইরে বসে মদ খেয়েছে। এটাই কায়দা। প্রথমে ভয় দেখাবে। তারপর টাকা তুলবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শিল্পতালুকে কোনও সিন্ডিকেট, দাদাগিরি চলবে না। তারপরেও এমন চললে কারখানা তুলে নিতে হবে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব।
ঘটনা ঘিরে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা
রাজগঞ্জে ‘শিল্পতালুকে দুষ্কৃতী তাণ্ডব ঘিরে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। জলপাইগুড়ির বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেছেন, ভাঙচুর না করলে তোলার টাকা পাবে না তো। দিদিভাইয়ের অনুপ্রেরণায় তোলাবাজি খুব ভাল করে শিখেছে এরা। উত্তরবঙ্গে শিল্প আসছে না এই কারণে। ওখানে ৫-৭টি গ্রুপ আছে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন নাকি টাকা খাওয়াবেন? এদিকে, জলপাইগুড়ি তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ আছে বাইরে থেকে শিল্প আনার জন্য। শিল্পে কেউ বাধা দিলে বরদাস্ত করা হবে না। আমাকে জানালে পারত। আমাকে কেউ জানায়নি।
এদিকে, ব্যবসায়ীমহল সূত্রে খবর, শিল্পতালুকে দুষ্কৃতী হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন- আলিয়ার উপাচার্যকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি, খুনের হুমকি টিএমসিপি-র প্রাক্তন ছাত্র নেতার!