কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডের বিরুদ্ধে শহরে প্রতিবাদ, মিছিল চলছে এখনও। মহালয়ার সকালে কলতায় মহামিছিল বের করেছেন চিকিৎসক, সাধারণ মানুষ। আর সেই আবহে ফের রাজনৈতিক বার্তা দিলেন তৃণমূলের সদ্য পদত্যাগী সাংসদ জহর সরকার। অন্য রাজ্যে বার বার সরকার পাল্টানোর উদাহরণ টেনে আনলেন তিনি। রাজ্যবাসীর রাজনৈতিক ভুল ধরিয়ে দিলেন জহর। (Jawhar Sircar)
আর জি কর কাণ্ড নিয়ে যাদবপুরে আয়োজিত গণ কনভেনশনে বক্তৃতা করতে গিয়েই এমন মন্তব্য করেছেন জহর। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "আমরা তখন ছোকরা ছিলাম। ল্যাম্পপোস্টগুলি ছোট ছোট ছিল। দাদারা মই দিয়ে বলল, ল্যাম্পের উপর সেলোফেন লাগা। বাম এসে গিয়েছে। আমরা লাগালাম, সারা কলকাতা লাল হয়ে গেল।" (Kolkata News)
জহর আরও বলেন, "আবার দু'-দু'বার সরকার তাড়িয়ে দেওয়া হল। কংগ্রেস যে '৭৭-এ বিদায় নিয়েছে, একেবারে বিদায় গিয়েছে। আর কোনও নির্বাচনে দাঁড়াতে পারছে না। ৩৪ বছর রাজত্বের পর বামকে যে বিদায় দিয়েছে, আর কিন্তু মুখ তুলে উঠতে পারছিল না। সেটা এখন আর বলব না, কোনও কারণে পারছিল না। ১৪ বছর ধরে দেখছি, কিছুতে, কোথাও দাঁড় করাতে পারছে না। ভাল ছাত্র, লোকাল ছেলে আনছে। কিন্তু পারছে না। ওই একবার বের করে দিলে, তার পর কিন্তু ইতিহাসের পাতায় মিশে যাবে, মনে রাখবেন।"
বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে অন্য রাজ্যের তুলনা টেনে জহর আরও বলেন, "এখানে আমাদের যেটা ভুল হয়েছে, রাজনৈতিক ভুল হয়েছে। প্রত্যেক রাজ্যে যেমন চাপাতির মতো ওলট-পালট করা হয়, রাজস্থানে দেখুন, একবার বিজেপি, একবার কংগ্রেস। দ্বিদলীয় নীতি মেনে একবার ডিএমকে, একবার এআইডিএমকে। লজিক বোঝা যায় না। দু'টো দলই এক সব ব্যাপারে। কিন্তু উল্টে-পাল্টে আনে, যা আমরা অনুসরণ করিনি। আমরা একবার যাকে দিই (ভোট), একেবারে সারাজীবন তার নামে...তোমার সঙ্গে, তোমারই জন্য বলে লেগে থাকি। তার পর হতাশ হয়ে বলি, এবার যাকে পাব বাবা...এবার ছেড়ে দাও আমাদের।"
আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় গোটা দেশ যখন উত্তাল, প্রতিবাদ, মিছিলে শহর কলকাতা যখন মুখরিত,সেই সময় আচমকা তৃণমূল সাংসদের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা করেন জহর। সাংসদ পদ তো বটেই, রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে চিঠি লেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আর জি কর কাণ্ডে তো বটেই, দুর্নীতি, দাদাগিরি নিয়ে দলের ভূমিকা নিয়ে চিঠিতে অসন্তোষ উগরে দেন তিনি। সেই থেকে বারং বার তৃণমূলের সমালোচনায় সরব হয়েছেন তিনি। অন্য রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের প্রসঙ্গ টেনে এবার যে মন্তব্য করলেন তিনি, তাও যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বামেদের নিয়ে জহরের মন্তব্যও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আর জি কর নিয়ে প্রতিবাদ এবং মিছিলে একাধিক বার বামেদের সক্রিয় ভূমিকার কথা উঠে এসেছে। তাই বামেরা মুখ তুলে উঠতে 'পারছিল না'র উপর যেভাবে জোর দিয়েছেন তিনি, তা-ও নজর কেড়েছে।