অনির্বাণ বিশ্বাস, মুর্শিদাবাদ: পরিবারকেও ছাড়েননি সিবিআইয়ের হাতে ধৃত জীবনকৃষ্ণ সাহা! মারধর করত। ক্রমাগত ছেলের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। বলছেন খোদ জীবনের জন্মদাতা। ছেলের গ্রেফতারির পর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জীবনকৃষ্ণর সৎ মা ও বোনও। 

জীবনকৃষ্ণ সাহার বোন চুমকি মণ্ডল সাহা বলেন, 'কোনও সম্পর্কই নেই ওঁর সঙ্গে। নিয়োগ দুর্নীতিতে যে যুক্ত তা ভাবতে পারিনি। টিভিতে শুনছি, দেখছি এটাই। আসা যাওয়া নেই আমাদের মধ্যে। ওঁর বোন বলে পরিচয় দিতে ঘেন্না লাগছে। সত্যিই কিছু বলার নেই। উনিও কোনওদিন বোনের মর্যাদাও দেননি। জ্ঞানত সম্পর্ক নেই। ও কোনওদিন বাবাকেই মান্যতা দেয়নি। যা দেখার আমরা দেখি।'  

সিবিআই, দলের বিড়ম্বনা তো বৃদ্ধি করেছে জীবন। সঙ্গে রয়েছে পরিবারের অসন্তুষ্টিও। জীবনকৃষ্ণ সাহার বাবা বিশ্বনাথ সাহা এবিপি আনন্দকে সাফ বলেন, 'ছেলে আমার ডেঞ্জারাস। দেখতে পাচ্ছেন না, আমার মনে ওর কোনও দুঃখ নাই।  যে আমার ক্ষতি করে, ও বুঝবে।' 

জীবনকৃষ্ণ সাহা। বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক। নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের হাতে ধৃত। অভিযোগ, তিনি যে শুধু বহু যোগ্য প্রার্থীর যোগ্যতা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তাই নয়, খোদ জীবনকৃষ্ণের বাবাই বলছেন, ছেলে ডেঞ্জারাস। তাঁর অভিযোগ, ছেলে তাঁর ক্ষেত্রেই ঘুষ খেয়ে অন্যকে বরাত পাইয়ে দিয়েছেন। জীবনের বাবার কথায়, 'আমার মনে কিচ্ছু হয়নি। আমার মনে কোনও দুঃখ নাই। যে আমার ক্ষতি করে, ও বুঝবে। আমি ওই সব ব্যাপারে আমি কোনও ইয়ে করি না, ইন্টারফেয়ার করি না। আজকে MLA হয়েছে, তাও বলেনি বা কীভাবে হয়েছে তাও বলেনি, আমায় কোনও দিন জানায়নি। আমাকে অসম্মান করে, সব সময়। আমার ব্যবসার উপরেও সমস্যা করে, ওই গোডাউনে গাড়ি লাগাতে দেয় না। আমার যা ক্ষতি করার, ওই কী অযোগ্য দিয়েছে না দিয়েছে, ওসব আমি বলতে পারব না। লোক আসত দেখতাম।'

আরও পড়ুন, খোঁজ মিলছে না মুকুল রায়ের! সল্টলেকের বাড়ি থেকে 'উধাও' প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক

এখানেই শেষ নয়, মারধর করত। ক্রমাগত ছেলের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। বলছেন খোদ জীবনের জন্মদাতা। জীবনকৃষ্ণের বাবার অভিযোগ, প্রতিবেশীদের উসকে, তাঁকে চাপ দিয়ে সাঁইথিয়ার বাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য করেছিল ছেলে। এমনকি ছেলের আচমকা উত্থান ও বিধায়ক হওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। 

জীবনকৃষ্ণ সাহার কীর্তিতে লজ্জিত তাঁর সৎ মা গায়ত্রী সাহাও। তিনি বলেন, 'খারাপ তো লাগছে, চাকরি করতে করতে এসব করছে, খারাপ তো লাগছে। ওর তো আমাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। ও যেভাবে হাইফাই চলে, আমরা তো সেরকম নিই, আমরা খুবই সাধারণ।' 

প্রসঙ্গত, ৬৭ ঘণ্টা ধরে তন্নতন্ন করে তল্লাশির পর, পুকুর থেকে উদ্ধার হল বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার দ্বিতীয় মোবাইল ফোন। গোটা পর্ব ঘিরে বিধায়কের বাড়ি চত্বরে ছিল টানটান উত্তেজনা। সিবিআই-এর দাবি, দুটি মোবাইল ফোন পুকুরে ফেলে দিয়ে ডিজিট্যাল তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করতে চেয়েছিলেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা।