কলকাতা : একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ রায়। কারোর কাছে যা ঐতিহাসিক। কারোর কাছে আবার তীব্র অস্বস্তির কারণ। কারোর কাছে আবার শ্রেফ লোকচক্ষুতে থাকার চেষ্টা বলে কটাক্ষ। সবমিলিয়ে স্কুল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ উঠলেই রাজ্যে সবথেকে চর্চিত নাম অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay)। কলকাতা হাইকোর্টের যে বিচারপতি কার্যত 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই'-এর মুখ হয়ে উঠেছেন শিক্ষকতার স্বপ্ন দেখা রাজ্যের হাজারো চাকরিপ্রার্থীর কাছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কি নিজে লোভ করেন ইতিহাসে নাম দেখার ? এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে-র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় যে বিষয়ে মুখ খোলেন তিনি।

'ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়ার লোভ?'

একাধিক নজিরবিহীন রায়, তার পিছনে ঠিক কী কারণ? কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কি ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়ার লোভ রাখেন? জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'লোভ রয়েছে অন্যরকম। বহু জাজমেন্ট আছে, আমরা পড়ি ভুলে যাই। ভারতবর্ষে অল্প কিছু জাজমেন্ট রয়েছে যা মাইলস্টোন হয়ে থেকে গিয়েছে। আমি সেই ধরণের জাজমেন্ট দেওয়ার মতো জায়গায় যেতেই পারব না, তার আগেই আমার অবসরের দিন চলে আসবে। আমি সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। কিন্তু আমি মনে রাখি জীবনানন্দ দাশকে। যিনি তাঁর জীবনে স্বীকৃতি পাননি। স্বীকৃতি পেয়েছিলেন মারা যাওয়ার পরে। আমি এরকম অন্তত একটা দুটো রায় দিয়ে যেতে চাই, নজির স্থাপন করে যেতে চাই, যেটা আমি যখন থাকব না, অনেক পরে হয়তো কোনও গবেষকের তথ্যে উঠে আসবে একজন জাজ ছিলেন, তিনি এরকম করতেন। সেটা পাগলামো হতে পারে, অন্যকিছু হতে পারে। আমি শুধু সেই আশা নিয়ে, বেঁচে কেউ থাকে না। ইতিহাস কাউকেই মনে রাখে না। হয়তো মনে থাকবে জ্যোতি বসু তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ইতিহাস কাউকে মনে রাখে না, আমাকেও রাখবে না।' ১৯৯৩ সালে জ্যোতি বসুর যে কথা প্রসঙ্গে তীব্র বিতর্কের কথা নিয়ে প্রশ্ন করলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সংযোজন, 'ইতিহাস তো সত্যিই মনে রাখে না জ্যোতি বসুকে। ক'বার ওঁর কথা উচ্চারিত হয়। পার্টির লোকেরা হয়তো করে, কিন্তু বাকিরা ক'জন করে। লোকে মনে রেখেছে সুভাষ বসুকে।'

পাশাপাশি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, 'এই একটা কাজ আমি করেছি বিচারপতি হিসেবে, সৎভাবে, তখন যে কাজটা করা একান্ত দরকার ছিল। আমি তো মনে করি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই প্রতিটা মুহূর্তে করা উচিত। পাশাপাশি এও জানি, হিমালয়ে না চলে গেলে সমাজে টিকে থাকতে হলে দুর্নীতির সঙ্গে কিছুটা সমঝোতা করে নিতে হয়। এটা আমার কথা নয়, এটা আমাকে কফি হাউসে বসে বুঝিয়েছিলেন নির্মাল্য আচার্য। আর তিনি এটা বুঝে এসেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের থেকে।'

দেখুন পুরো সাক্ষাৎকার-

আরও পড়ুন- "আমাকে হয়ত পরে মেরে ফেলতে পারেন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না", এবিপি আনন্দে বিস্ফোরক বিচারপতি