সৌভিক মজুমদার ও বিজেন্দ্র সিংহ, কলকাতা: CBI তদন্ত নিয়ে ফের অসন্তোষ প্রকাশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। দুর্নীতির সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়ার কথাও বলেন তিনি। সূত্রের খবর, তিনি বলেন, 'দুর্নীতির সমুদ্রে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি। CBI জানেও না পিছনের দরজা দিয়ে কোন্ কাজ হয়েছে। এদিকে, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এমাসের শুরুতেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়, ED-CBI কে যে যৌথ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন, বুধবার তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় CBI-এর ভূমিকায় কার্যত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। বুধবার হাইকোর্টে, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তের রিপোর্ট পেশ করে সিবিআই। সেখানে বলা হয়, জেরায় জেলবন্দি প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ২০১৪ র টেটের OMR সরবরাহের জন্য কোনও টেন্ডার ডাকা হয়নি। ২০১২-র টেটের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছিল।
সেখানেই প্রথম বরাত পায় OMR সরবরাহ ও মূল্য়ায়নকারী সংস্থা এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি। সিবিআইয়ের দাবি, জেরায় মানিক জানান, ভালো কাজ করায়, এবং অন্য কেউ টেন্ডার জমা না দেওয়ায় বরাত দেওয়া হয় এই কোম্পানিকে। এই কোম্পানিকে "confidential section" বলে অভিহিত করে পর্ষদ। এদিকে, হলফনামায়, এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি জানিয়েছে, ২০১৩ সালে অগ্রিম ১০ লাখ টাকা দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সিবিআইয়ের এই রিপোর্টে কার্যত অসন্তুষ্ট হন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। তিনি বলেন, বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা অগ্রিম চাইলই না, অথচ তাকে ১০ লাখ টাকা অগ্রিম দিল পর্ষদ! এটা যদি বেআইনি না হয়, তাহলে কোনটাকে বেআইনি বলে আমার জানা নেই।
বিচারপতির কড়া বার্তা:
সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে প্রবল সমালোচনা করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। Confidential Section নামে একটি সংস্থাকে অভিহিত করে টেন্ডার ছাড়া কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে! এটা কী হচ্ছে? এটা কোনও জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে? হাইকোর্টের অনেক আইনজীবীও এর থেকে ভাল জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এমনটাই ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি। পাশাপাশি, মানিক ভট্টাচার্যকে কার্যত ভর্ৎসনা করে বিচারপতি বলেন, নির্দ্বিধায় মিথ্যা বলার অভ্যাস মানিক ভট্টাচার্যর আছে। আদালতের সামনে সেটা প্রমাণিতও হয়েছে। এদিন, বিচারপতি বলেন, 'এত ভুরি ভুরি অনিয়মের অভিযোগ আসছে এবং আদালতের কাছে এত তথ্য প্রমাণ আছে, যে ২০১৪-র টেটের ভিত্তিতে হওয়া, ২০১৬-র নিয়োগপ্রক্রিয়া খারিজ করে দেওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এটা করলে কিছু বৈধভাবে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। একজনও বৈধপ্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমার ভালো লাগবে না। এখনও নিয়োগ দুর্নীতিকে ঢাকতে কিছু দালাল বাজার ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুর্নীতির সব নদী একই সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে। সমুদ্র থেকে মানিক বেছে তুলতে হবে।'
সূত্রের খবর, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, 'দুর্নীতির সমুদ্রে আপনারা সাহায্য করার পরেও আমি হাবুডুবু খাচ্ছি। CBI তো জানেও না পিছনের দরজা দিয়ে কোন্ কাজ হয়েছে।' শিক্ষা দফতরের উদ্দেশ্য়ে বিচারপতি বলেন, 'এই সরকারের শিক্ষা দফতর কী করে এই দুর্নীতি দেখেও তাদের চোখ বন্ধ করে রাখল, সেটা ভেবে আমি বিস্মিত।'
প্রায় ৪২ হাজার ৫০০ জনের এই প্যানেল থাকবে, না বাতিল হবে, সেবিষয়ে সব পক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে আদালত। এদিকে গত দোসরা মার্চ ২০১৪-র টেটের ভিত্তিতে, ২০২০-র নিয়োগে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, সেই মামলায় CBI-ED-কে যৌথ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। সেই মামলায় বুধবার স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন: 'কে নেতা হবে আগ্রহ নেই', 'দেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে' বিরোধী-ঐক্যের আহ্বান মমতার