সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: বিচারপ্রক্রিয়ায় গতি আনতে আধুনিক প্রযুক্তির (Modern Technology) ব্যবহার আগেই করেছিলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার। এবার পথ দেখালেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি দেবাংশু বসাক। দেখে অবাক আইনজীবী থেকে বিচারপ্রার্থীরা। 


কী ঘটেছিল?
পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার দুপুর ২ টোর পর থেকে বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পদমর্যাদার কর্মীরা। ফলে বিচারপতির নির্দেশ লিপিবদ্ধ করার মত কোন আধিকারিক এজলাসে উপস্থিত ছিলেন না। কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে কলকাতা হাইকোর্ট। এজলাসে বসেও কর্মীর অভাবে  উঠে যান অনেক বিচারপতি। তখনই ব্যতিক্রমী ভূমিকায় দেখা যায় বিচারপতি দেবাংশু বসাককে। ঠিক দুপুর ২টোয় তাঁর এজলাসে শুরু হয় পণের জন্য বধূহত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া এক মামলার শুনানি। দুপক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল - জবাব শেষে আসে নির্দেশ লিপিবদ্ধ করার সময়। কিন্তু কী ভাবে লিপিবদ্ধ হবে নির্দেশ ? আদালতে তো কোনও স্টেনোগ্রাফারই নেই ! ঠিক সে সময় নিজের ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করে চালু করলেন বিচারপতি বসাক। তারপর মাথায় লাগিয়ে নিলেন মাইক সমেত হেডফোন। আইনজীবী থেকে বিচারপ্রার্থী , অনেকেই অবাক ! কারণ এধরনের দৃশ্য সচরাচর হাইকোর্টে দেখা যায় না। এর পর নির্দেশ দেওয়া শুরু করলেন বিচারপতি বসাক। 
তিনি মুখে যা বললেন, 'সেটা ভয়েস রিকগনিশন সফওয়ারের মাধ্যমে রেকর্ড হয়ে গেল তার ল্যাপটপের মধ্যে। যেখান থেকে পরে এই নির্দেশনামার প্রিন্টআউটও নেওয়া যাবে আবার হাইকোর্টের সার্ভারেও পাঠানো যাবে।' ফলে তাঁর এজলাসে  স্তব্ধ হল না বিচার প্রক্রিয়া। প্রসঙ্গত, এর আগেও একবার হাইকোর্টের কর্মচারীদের কর্মবিরতির সময় একই পদ্ধতি অবলম্বন করে রায়দান করতে দেখা গিয়েছিল বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তকে। আবার একটি মামলার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় নথি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নিয়ে এসে বিচার প্রক্রিয়ায় গতি আনেন বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার।


সুপ্রিম কোর্ট...
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির হওয়ার পর বিচারব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহারের সপক্ষে বারবার সওয়াল করেছেন বিচারপতি ডি. ওয়াই. চন্দ্রচূড়। কোভিডের সময় গোটা দেশের সব আদালতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়াল শুনানি শুরু হয়। যদিও কোভিড কিছুটা কমতেই একাধিক হাইকোর্টে ভার্চুয়াল শুনানি বন্ধ করে দেওয়া হয় বা শর্তসাপেক্ষে চালু করা হয়।এই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়।  তিনি বলেছিলেন, এই প্রযুক্তি এখন চালু হয়েছে এবং এটা ভবিষ্যতেও থাকবে। একাধিক হাইকোর্ট প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, 'কেউ প্রযুক্তির বিরোধিতা করতেই পারেন, কিন্তু আজকের দিনে কেউ কি বলতে পারবেন যে আমি মোবাইল ব্যাবহার করব না?' প্রযুক্তির পক্ষে সওয়ালে তিনি আরও জানান, নিখুঁত বিচারব্যবস্থার স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তি একটি বড় হাতিয়ার। এ ছাড়াও লাইভ স্ট্রিমিং র মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়াকে সাধারণের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। এই প্রেক্ষিতে আজ বিচারপতি দেবাংশু বসাকের পদক্ষেপ গুরুত্ব পূর্ন বলেই মনে করছে আইনজীবী মহল।


আরও পড়ুন:শরীরে জমেছিল প্রাণঘাতী পারদ, কলকাতা মেডিক্যালে বিরল অস্ত্রোপচারে বাঁচল তরুণের প্রাণ