সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: পড়াশোনা করতে করতে কাজ করতেন। বাড়ির পাশে দাঁড়াতেই কলেজে পড়াশোনার পরে করতেন কেটারিংয়ের কাজ। ২০১৮-র ১৩ মে, সেই কাজেই বেরিয়েছিলেন দীপঙ্কর। বাড়ি ফিরে এসে দেখেন গোটা বাড়িটাই পুড়ে গিয়েছে। আর সেখানে পড়ে রয়েছে বাবা-মায়ের পোড়া দেহ। দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে তিনি ছুটে গিয়েছিলেন থানায়। তারপর থানা-আদালত-বাড়ি করেই কেটেছে। কিন্তু বিচার পাননি। শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন আইনের পাঠ। পাশ করে গায়ে তুলেছেন কালো কোট।    


বাবা-মায়ের খুনিদের সাজা দিতে একটা সময় আদালতে ছুটে বেরিয়েছেন। আজ তিনি নিজেই আইনজীবী। কাকদ্বীপে দেবু ও উষা দাসকে খুনের তদন্তে, SIT গঠনের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এই নির্দেশ দেওয়ার সময় এজলাসেই উপস্থিত ছিলেন নিহত দম্পতির ছেলে দীপঙ্কর দাস।


মা-বাবা দেখে যেতে পারেননি, ছেলে আইনজীবী হয়েছে। কিন্তু, মা-বাবার খুনের মামলা যেদিন নতুন মোড় নিল, সেদিন আইনজীবী হিসেবে হাইকোর্টে উপস্থিত থেকেই তা দেখলেন দীপঙ্কর দাস। কাকদ্বীপের নিহত সিপিএম কর্মী দম্পতির ছেলে। তাঁর জীবন কোনও ছবির চিত্রনাট্য়ের থেকে কোনওদিক থেকেই কম নয়। একদিন বাড়ি ফিরে আচমকা মা-বাবার পোড়া মৃতদেহ দেখতে হয়েছে। নিজের বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। বিচার চেয়ে দীর্ঘ লড়াই চালাতে হয়েছে। পেরিয়ে গিয়েছে পাঁচ পাঁচটা বছর। কিন্তু দীপঙ্কর দমে যাননি। হারও স্বীকার করেনি। মা-বাবাকে হারিয়ে, ঘটনার পরের দিনই থানায় ছুটে গেছিলেন সেদিনের কলেজ পড়ুয়া দীপঙ্কর। কিন্তু তাঁকে নাকি অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। দীপঙ্কর বলেছিলেন, '১৪ মে থানায় যাই। তাদের কাজ আছে বলে অপেক্ষা করতে বলেছিল। ২-৩ ঘণ্টা বসে চলে আসি।' মা-বাবার মৃত্য়ুর তিনদিন পরও তাঁদের দেহ হাতে পাননি দীপঙ্কর। 


আইনের দরজায়:
এরপর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। মা-বাবার খুনের মামলার বিচার চেয়ে দিনের পর দিন আদালতে ছোটাছুটি করতে হয়েছে। তবে তারপরও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন আইনের জগতকেই। তিনি বলেন, 'উকিল হওয়ার কোর্ট পথ কতটা কঠিন ছিলাম। আদালতে যেতাম কালো কোট পরা দেখতাম, হাইকোর্টে এসে অনেকে বলেছিলাম টাকা নেই-আইন পড়া কঠিন, কয়েকজন আইনজীবীর সাহায্য করেছিলাম।'


দীর্ঘদিনে লড়াইয়ের শেষে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার সোমবারের রায়ে সাময়িক স্বস্তি পেয়েছেন, কাকদ্বীপে মৃত দম্পতির ছেলে দীপঙ্কর। দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে আগামী দিনে তদন্ত কোন পথে এগোয়, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তিনি।


আরও পড়ুন: তীব্র বিতর্কের পর সংশোধন-বিজ্ঞপ্তি! 'আজাদ কাশ্মীর' নয়, শুধু 'কাশ্মীর', জানাল পর্ষদ