সোমনাথ মিত্র, হুগলি: নীচে শয্যায় রয়েছে মহাদেব, তাঁর উপর মাথার খুলি, আর সেই খুলির উপর মহাকাল। আর সেই মহাকালের উপর বসে মা কালী। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এমন মূর্তিতেই পূজিতা হচ্ছেন দেবী। শ্যামা পুজোর দিন থেকে টানা আট দিন পূজিত হয়ে আসছেন 'শ্রী শ্রী আনন্দময়ী মাতা'। হুগলি জেলার  ধনিয়াখালির বেলমুড়ি গ্ৰামের এই পুজো ঘিরে রয়েছে নানা বৈশিষ্ট্য।  


আলোর উৎসব নিয়ে এখন তুঙ্গে প্রস্তুতি। সেই সময়েই চলছে প্রস্তুতি। হুগলির ধনিয়াখালির বেলমুড়ি গ্রামে 'শ্রীশ্রী আনন্দময়ী মাতা রিলিজিয়াস্ ট্রাস্ট'-এর অধীন মন্দিরে জোর কদমে চলছে মায়ের মূর্তি তৈরীর কাজ। ট্রাস্টের সদস্যরা জানালেন প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই পুজোয় একাধিক প্রাচীন বৈশিষ্ট্য আছে যা বাংলার আর কোনও শ্যামাপুজোয় খুব একটা দেখা যায় না। ট্রাস্টের সদস্যরা জানাচ্ছেন, প্রাচীন পুঁথিতে লিপিবদ্ধ করা পুজো পদ্ধতি অনুসরণ করেই এখানে পুজো করেন পুরোহিত।


কীভাবে এল এই পুঁথি:
ট্রাস্টের লোকজন জানাচ্ছেন, শতাধিক বছর আগে সেই পুঁথি সংস্কার করে নতুন করে রূপ দিয়েছিলেন গ্রামেরই তিন টোল পুরোহিত প্রফুল্ল চট্টোপাধ্যায়, রাখাল দাস মুখোপাধ্যায় এবং তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন তাঁদের লেখা পুঁথি ধরেই এখনও পূজিত হন শ্রী শ্রী আনন্দময়ী মাতা।
  
কালীপুজোর দিনই মায়ের গায়ে রং করে চক্ষু দান করা হয়। নীলচে কালো রঙে সেজে ওঠেন মা। মালাকাররা এসে মায়ের অঙ্গ সাজিয়ে তোলেন। তারপর মন্দিরের মধ্যে আদি পঞ্চমুন্ডের বেদিতে বসিয়ে পুজো শুরু হয় 'শ্রী শ্রী আনন্দময়ী মাতা'র। কালীপুজোর পরের দিন ব্রাক্ষণকন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করা হয় এখানে। পুজো ঘিরে প্রবল ভিড় হয় এখানে।


নিত্যপুজোয় ভোগ:
এখানে প্রত্যেকদিন মায়ের কাছে সকালে অন্নভোগ দেওয়া হয়। রাতে লুচি-ভোগ নিবেদন করা হয়। এই পুজোয় বংশপরম্পরায় যুক্ত থাকেন সকালে। বংশ পরস্পরায় পুরোহিত, বাদ্যকর, মালাকাররা কাজ করেন এখানে। মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে মালাকার, বাদ্যকর এবং পুরোহিতের জন্য নির্দিষ্ট ঘর তৈরি রয়েছে। যেখানে তাঁরা পুজোর কদিন বসবাস করেন। পুজো উপলক্ষে নহবত বসে মন্দির চত্বর এলাকায়। মন্দির কর্তৃপক্ষের একটি নির্দিষ্ট ঘরে টানা আটদিন থেকে নহবত বাজান শিল্পীরা।


ট্রাস্টের সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পঞ্চমুন্ডের আসনটি এখনও মাটির, কালীপুজোর দিন মূর্তি তৈরি সমাপ্ত হলে মাকে সেখানে বসিয়ে পুজো শুরু হয়। দূরদূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ এখানে পুজো দিতে আসেন বলে জানান তিনি। ট্রাস্টের অন্য এক প্রবীণ সদস্য অনিল কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'দুর্গাপুজোয় যেমন কুমারী পুজো হয়, তেমনই কালী পুজোর পরের দিন এখানে কুমারী পুজো হয়। পুজোয় পুরোহিত কোনও পারিশ্রমিক নেন না। ট্রাস্টের তরফে শুধুমাত্র ১ টাকা এবং পুজোর কয়েকটি কাপড় প্রদান করা হয় মাত্র।'


আরও পড়ুন:  ১০০০০ ফুট উচ্চতায় দীপাবলি পালন ভারতীয় জওয়ানদের, দেশবাসীকেও শুভেচ্ছা