কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা : রেশন বণ্টন দুর্নীতি ( Ration Scam )  নিয়ে, এখন যে তোলপাড় চলছে, তার শুরুটা হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু  তাতে সাড়া দেননি কোনও কর্তাই! এক দশক আগে রাজ্য়ে তখনও ক্ষমতায় তৃণমূলই। সেই সময়ে এই রেশন দুর্নীতি নিয়ে  প্রথম অ্য়ালার্মটা বাজিয়েছিলেন তৃণমূলেরই সাংসদ কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ( Kalyan Bandyopadhyay )  ! 


আনন্দবাজার পত্রিকায় ( Ananda Bazar Patrika ) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৃণমূলের হয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় জিতে আসা, দলের প্রবীণ আইনজীবী সাংসদ, কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায় একেবারে হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে খাদ্য় দফতরের দুর্নীতি নিয়ে CBI তদন্ত চেয়েছিলেন! অন্য় একটি মামলায় সওয়াল করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, খাদ্য় ও খাদ্য় সরবরাহ দফতরের কয়েকজন অফিসারের জন্য় নৈরাজ্য় চলছে। অবিলম্বে সিবিআইয়ের মতো কোনও স্বাধীন সংস্থাকে দিয়ে ওই বিভাগের কাজকর্মের তদন্ত করা উচিত।


সেটা ছিল ২০১৩ সাল। তখন রাজ্য়ের খাদ্য়মন্ত্রীর নাম - জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিক। কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের মতো বর্ষীয়ান আইনজীবী সাংসদ, দুর্নীতির অভিযোগ এবং সিবিআই তদন্তের দাবি তোলা সত্ত্বেও সিবিআই তদন্ত তো দূরের কথা, সেরকম কড়া কোনও ব্য়বস্থাই নেয়নি রাজ্য় সরকার। 


তাৎপর্যভাবে সেই সময়েই,  রেশনের খাদ্য়শস্য়, খোলা বাজারে বিক্রি সংক্রান্ত দুর্নীতির যে অভিযোগে আজ জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই সময়ে তার কথা তিনি নিজেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, 'যেটা BPL-এর চাল, গরিব মানুষকে ২ টাকায় চালটা দিচ্ছি, সেই চালটায় ২ কুইন্টাল ৪১ কেজি শর্ট পড়েছে। এই চালটাকে আমাদের ২ টাকায় দিলে, চালটাকে বাজারে ১৯টাকা, ২০ টাকা করে বিক্রি করে দিচ্ছে। তারপর (রেশন) মালিক আমাকে হাতজোড় করে বলছেন, আমাকে দেখবেন। চোরকে আর দেখা যায়? চোরের জায়গা তো জেলে হবে।' 


 তৃণমূল সূত্রে দাবি, এরপর দীর্ঘদিন কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করে দেন জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিক। আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ওপর ক্ষুব্ধ হন মুখ্য়মন্ত্রীও। তাঁকে সরকারি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা অবধি ভাবা হয় বলে সূত্রের দাবি। 

তারপর দশ-দশটা বছর পেরিয়ে গেছে। আর এখন সেই রেশন দুর্নীতির মামলা ঘিরেই রাজ্য়ে তোলপাড়! তৎকালীন খাদ্য়মন্ত্রী জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিকই গ্রেফতার হয়ে ইডি-র হফাজতে। ২০১৩-তে কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্য়বস্থা নেওয়া হলে কি রেশন দুর্নীতি এত বড় চেহারা নিতে পারত? সেই প্রশ্ন এখন থেকেই যাচ্ছে।