উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, সমীরণ পাল, রাজীব চৌধুরী, কলকাতা: দশ বছর ধরে চলেছে মামলা। নিম্ন আদালতের রায় পাল্টে গিয়েছে হাইকোর্টে (High Court)। কামদুনি মামলায় (Kamduni Case) হাইকোর্টের রায় নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন নির্যাতিতার পরিবার, ক্ষুব্ধ কামদুনি কাণ্ডের প্রতিবাদীরাও। বিচারের দাবি নিয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হচ্ছেন কামদুনির প্রতিবাদী ও মৃত ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা। সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকারও। কিন্তু তাতে কতটা লাভ হবে? কী বলছেন আইন বিশেষজ্ঞরা?
কামদুনিকাণ্ডে দোষীদের আরও কড়া শাস্তির দাবিতে লড়াই চালিয়ে যেতে চান কামদুনির প্রতিবাদী ও মৃত ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা। কলেজ পড়ুয়া যে হিংস্রতা এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা সমাজকে। পথে নেমেছিলেন বহু নাগরিক-বিদ্বজন। সেই মামলায় হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় বলেই দাবি মৃত ছাত্রীর পরিবার, টুম্পা কয়াল, মৌসুমী কয়ালদের। কিন্তু আইন কী বলছে? আইনজ্ঞদের প্রশ্ন, কামদুনির লড়াইয়ের দৃঢ়তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন না উঠলেও, তদন্তকারীদের সদিচ্ছা নিয়ে ইতিমধ্য়েই প্রশ্ন উঠেছে, তারা যে তথ্য় প্রমাণ হাইকোর্টে দাখিল করেছে, তার ভিত্তিতে কি সুপ্রিম কোর্ট থেকেও কোনও আশার আলো দেখা সম্ভব?
খোদ কলকাতা হাইকোর্ট তার রায়ের কপিতে উল্লেখ করেছে এই অপরাধ পূর্ব পরিকল্পিত এবং ষড়যন্ত্রমাফিক ঘটানো হয়েছে, তা সন্দেহের ঊর্ধ্বে প্রমাণে ব্য়র্থ হয়েছে সরকারপক্ষ। রায়ের কপিতে আরও বলা হয়েছে, ধর্ষণ এবং খুনে, সইফুল এবং আনসারের মতো একই উদ্দেশ্য় ছিল এমামুল, ভুট্টো, ভোলা এবং আমিন আলির, সরকারপক্ষের এই যুক্তি নড়বড়ে ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে এবং তা প্রমাণিত একথা বলা যায় না। তাই কামদুনির তদন্তের ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ ইতিমধ্য়েই জোরালভাবে উঠেছে। আদালত তার বিচার করে পুলিশি তদন্ত এবং তথ্যপ্রমাণের উপর। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, 'কোর্টকে তো সবসময় পুলিশের তদন্তের উপর নির্ভর করে চলতে হয়। আদালত তো সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া চলতে পারে না। হাইকোর্টের দুই বিচারপতি বলেছেন, যে পুলিশ তাদের কাজে গাফিলতি করেছে, যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেনি। ক্রাইম ডিটেকশন ঠিকভাবে হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।'
কামদুনিকাণ্ডে, হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে গেছে রাজ্য সরকার। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা রাজ্য় সরকারের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, 'কেউ বেকসুর খালাস হয়ে গেলে, আমরা কেন নোটিস জারি করব? তদন্ত শেষ।, ফলে বেকসুর খালাস পাওয়া অভিযুক্তের মুক্তি আটকাতে CRPC-তে কি কোনও বিধান আছে?' এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী সপ্তাহে।
বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকেই দুষেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury)। তাঁর প্রশ্ন, 'সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রয়োজনটা হল কেন? তার পিছনেও সারা বাংলার মানুষের গণরোষ প্রতিফলিত হচ্ছে। নেতাদের জন্য় হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে খরচা করতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু, কামদুনির আমাদের ঘরের সেই মেয়েটার অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য় কেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার এতদিন উদাসীন থাকল এবং এখন সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার গল্প শোনাচ্ছে বাংলার মানুষ তাও লক্ষ্য় করছে। এই নাটক দেখতে আমরা অভ্য়স্ত। তাই এই নাটকের নাটকীয়তায় আমাদের কোনও ভরসা নেই।'
এক দশক পুরনো ঘটনা। এতদিন ধরে চলেছে তদন্ত, তারপর বিচার। যেখানে তদন্ত এবং প্রমাণ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে সেখানে শীর্ষ আদালতে কি কামদুনিবাসীর মনের মতো বিচার মিলবে? তাঁরা লড়াই জারি রাখলেও, থেকেই যাচ্ছে অনিশ্চয়তা।
আরও পড়ুন: আদালতের সময়সীমা শেষের আগেই জমা পড়ল অভিষেকের নথি, খতিয়ে দেখা শুরু করবে ইডি