হিন্দোল দে, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: নিজের ওপর হওয়া অত্য়াচারের বিবরণই নয়। কসবা ল কলেজের ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, কীভাবে দিনের পর দিন, কলেজে মৌরসিপাট্টা চালিয়েছে মনোজিৎ মিশ্র। একজন অস্থায়ী কর্মী হয়েও কলেজে তার প্রভাব ছিল অপরিসীম। তার বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও অভিযোগ করলে, ঘুরপথে সেই অভিযোগ গিয়ে পৌঁছত মনোজিতেরই হাতে। তারপর অভিযোগকারীর ওপর শুরু হত অত্যাচার। মনোজিৎ মিশ্রের অত্যাচারের সম্মুখীন হওয়া ছাত্রী বলছেন, 'ইউনিয়ন রুমে আয়', এই কথাটা শোনাই যেন ছিল আতঙ্কের।
সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ অভিযোগকারিণী ছাত্রী জানিয়েছেন,'ইউনিয়নরুমে মেয়েটা যাবে এক ডিগনিটি নিয়ে যতক্ষণে দরজাটা খুলবে তার আর কোনও ডিগনিটি বাকি থাকবে না।' অভিযোগ, এসব কে থোরাই কেয়ার করত কসবাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত প্রাক্তন TMCP নেতা ও বর্তমানে তৃণমূল কর্মী মনোজিৎ মিশ্র! প্রভাবশালী মনোজিতের সবই ছিল হাতের মুঠোয়। আর তার জেরেই সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে মৌরসিপাট্টা চালাত মনোজিৎ মিশ্র। আর ইউনিয়ন রুমই ছিল মনোজিতের যন্তরমন্তর ঘর। এমনই অভিযোগ করলেন সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজেরই আরেক ছাত্রী!
সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের অভিযোগকারিণী ছাত্রী বলেন, 'ইউনিয়ন রুমের চাবি তার কাছেই থাকত। গার্ডরুমে গার্ডই ঢুকত না। ইউনিয়ন রুমে আয়। এটা খুব একটা কমন থ্রেট হয়ে গেছিল যে ইউনিয়ন রুমে আয়। ওই ইউনিয়নরুমে ঢোকানোর পরে কার সাথে কী কথা বলা হবে, কার গালের উপরে কটা থাপ্পড় মারা হবে বা কতভাবে তাকে হেনস্তা করা হবে বা মলেস্ট করা হবে, সেগুলোর কোনও রেকর্ড থাকত না।'কলেজে থ্রেট কালচার চালাত মনোজিৎ। আর তা যে শুধু ছাত্রছাত্রীদের ওপরই চলত, তেমনটা নয়! অভিযোগ, মনোজিতের ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতেন অনেক অধ্যাপকরাও। আপনারা কি আতঙ্কে থাকতেন? এবিপি আনন্দ এর প্রশ্নে সাউথ ক্য়ালকাটা ল'কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ও অধ্যাপক হরিপদ বণিক বলেন, আতঙ্কে থাকতাম। থ্রেট কালচার ছিল এবং সেটা প্রত্যেকটা মানে কলেজের কোণা থেকে কোণা (কর্নার টু কর্নার)। ছিল না থ্রেট কালচার, সে কথা তো বলতে পারব না, ছিল।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মাথায় কলেজ কর্তৃপক্ষ বা গভর্নিং বডির হাত না থাকলে, এই ক্ষমতা অর্জন করা কি সম্ভব? সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ অভিযোগকারিণী ছাত্রী বলেন,কলেজের মধ্যে স্টুডেন্ট হিসাবে আমরা যে ইনফরমেশন গুলো দিচ্ছি, সে বাবা মায়ের ফোন নম্বর হোক, তাদের নাম হোক, রেসিডেনশিয়াল ডিটেল হোক, সেগুলো তো কারও স্যর ছাড়া জানা পসিবল নয় যদি একমাত্র কলেজ থেকে অ্যাকসেস না পায় ডকুমেন্টের। আমরা একটা গ্রাফিতি করতে চেয়েছিলাম। দেয়নি। উল্টে ওখানে একটা অস্থায়ী কর্মী তার নামে দেওয়াল লিখে রেখেছে। ভাইস প্রিন্সিপাল দেখেননি? গান্ধারী হয়ে বসেছিলেন?
যদিও, কলেজের গভর্নিং বডির প্রধান, তৃণমূল বিধায়কের দাবি, মনোজিতের দৌরাত্ম্য় নিয়ে না কি তিনি আগে কিছুই জানতে পারেননি! সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ এর পরিচালন সমিতি তৃণমূল বিধায়ক সভাপতি অশোক দেব বলেন, 'এখন তো শুনতে পাচ্ছি। এই ঘটনাটা ঘটার পর এখন জানতে পারছি। যদি ঘটনাটা না ঘটত, তাহলে আমরা জানতাম না।'যাঁদের মদতে মনোজিৎ মিশ্র ম্য়াঙ্গো দাদা হয়ে উঠেছিল, তাঁদের কি কোনওদিন শাস্তি হবে?