ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা:  কসবাকাণ্ডে  গ্রেফতার করা হয়েছে তিন জনকে। মূল অভিযুক্ত, প্রাক্তন TMCP নেতা ও এবং কলেজের অস্থায়ী কর্মী মনোজিৎ মিশ্র (৩১)। অভিযোগ এই মনোজিৎকে সাহায্য করে কলেজের দুই পড়ুয়া প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০) এবং জেব আহমেদকে (১৯)। ঠিক কী ঘটেছিল বুধবার রাতে? এফআইআরে পুঙ্খানুপুঙ্খ লেখেন অভিযোগকারিণী।  FIR-এ তিন অভিযুক্তকে J, M ও P বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

সেখানে  উল্লেখ, ' ১২.০৫ নাগাদ কলেজে পৌঁছোই। ফর্ম ফিল আপের পর আমি অন্য়দিনের মতো, ইউনিয়ন রুমে গিয়ে বসি। 'J' সেখানে ঢোকে এবং সবাইকে বসতে বলে। আমরা তাই করি। সে প্রাক্তন ছাত্র এবং কলেজের কর্মী। সে কলেজের TMCP ইউনিটের অঘোষিত প্রধান এবং অত্য়ন্ত প্রভাবশালী। সবাই তার কথা শোনে। TMCP ইউনিটে সে সবাইকে পদ দেয়। আমাকেও সে গার্লস সেক্রেটারির পদ দিয়েছিল। 'J' আমাকে বাইরে ডেকে বলে, সে প্রথম দিন থেকে আমাকে পছন্দ করে। গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও সে আমার প্রেমে পড়েছে। আমাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেয়। আমি প্রস্তাব প্রত্য়াখ্য়ান করে বলি, আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। আমি তাকে ভালবাসি। আমি তাকে ছাড়তে পারব না।  

FIR-এ অভিযোগকারিণী লিখেছেন,  সেদিন সাড়ে ৭টা নাগাদ ইউনিয়নের GS (সাধারণ সম্পাদক) এই বলে বেরিয়ে যান, যে তিনি শীগগিরই কিছু কাজ সেরে ফিরে আসবেন। তখনই তিনিও জিনিসপত্র গুছিয়ে বেরোতে যান। তখন 'J' তাঁকে  আটকায় এবং  'P' ও 'M'-কে চোখের ইশারায় বাইরে যেতে বলে। তারা বেরিয়ে যায় এবং 'J'-র কথা মতো বাইরে থেকে দরজা আটকে দেয়। তিনি সেই সময় কিছুই করতে পারেননি। সেকেন্ডের মধ্য়ে 'J' তাঁকে ওয়াশ রুমের কাছে নিয়ে যায় এবং তাঁকে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য জোরাজুরি করে। তিনি আটকানোর চেষ্টা করেন, ঠেলে সরিয়ে দেন।  কাঁদতেকাঁদতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুনয় - বিনয় করতে থাকেন। বলেন, তাঁর  বয়ফ্রেন্ড আছে। তাঁকেই ভালবাসেন। তাও তাঁকে ছাড়া হয়নি বলে অভিযোগ।   FIR-এর অভিযোগকারিণী উল্লেখ করেছেন, 'তারা জোর করে আমাকে গার্ডের ঘরে নিয়ে যায়। 'J' আমাকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করে। আমি বাধা দিলে, সে আমাকে ব্ল্য়াকমেল করে, হুমকি দেয়, যা সে আগে থেকেই করে আসছিল। সে আমাকে হুমকি দেয়, আমার বয়ফ্রেন্ডকে খুন করে দেবে, আমার মা-বাবাকে গ্রেফতার করিয়ে দেবে। তাও আমি বাধা দিই। তখন সে আমার দু'টো নগ্ন ভিডিও দেখায়, যেগুলো আমাকে ধর্ষণের সময় তোলা। সে শাসায়, আমি বাধা দিলে, সে যখন ডাকবে তখনই না এলে সেগুলো সবাইকে দেখিয়ে দেবে। 'J' যখন আমাকে ধর্ষণ করছিল, তখন 'M' আর 'P' দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। সে আমাকে হকি স্টিক দিয়েও মারার চেষ্টা করে। আমি মড়ার মতো পড়ে ছিলাম। সে ধর্ষণ করে, আমাকে ফেলে রেখে চলে যায়। আমি ১০.৫০-এ ঘরের বাইরে যাই। সে বলে, আমি যেন কাউকে এসব না বলি।' 

এখন, খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ঘটনার সময় অর্থাৎ সন্ধে সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৩ অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র, প্রমিত মুখোপাধ্যায়, জেব আহমেদ ছাড়া আর কারা ওখানে ছিল। নির্যাতিতার অভিযোগ ছিল, নিরাপত্তারক্ষীর সাহায্য চেয়েও পাননি।কেন পাননি? কলেজে মনোজিতের দাপটের কারণে? নাকি নিরাপত্তারক্ষীকে হুমকি হয়েছিল? তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।