অর্ণব মুখোপাধ্য়ায় ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা: তৃণমূলে কি পদ বিক্রি করা হয়? কসবাকাণ্ডের আবহে প্রশ্নটা জোরালভাবে তুলে দিলেন, রাজ্য়ের বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী ও কসবার বিধায়ক জাভেদ খান। তৃণমূল কাউন্সিলরের ওপর হামলার ঘটনার পর ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভুরি ভুরি জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগের পাশাপাশি, সামনে এসেছে মহম্মদ জুলকার নাইন আলি নামে এক ব্যবসায়ীর নাম। যাঁর বিরুদ্ধে গুলশন কলোনিতে ১২০ বিঘার একটি জলাশয়ের একাংশ, নিজের জমি বলে দাবি করে ভরাট করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। সুশান্ত ঘোষের ওপর হামলার পর একটি চিঠি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে অনেকগুলো মামলা জুলকারের বিরুদ্ধে চলায় তাঁকে পদ থেকে বহিষ্কৃত করা হচ্ছে। কিন্তু কেন তাঁকে দলে নেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্নই তুলে দিয়েছেন জাভেদ খান। ব্য়বসায়ী, মহম্মদ জুলকারনাইনকে তৃণমূলে নেওয়ার পিছনে, আর্থিক লেনদেন থাকতে পারে বলেও মন্তব্য় করেছেন জাভেদ খান। 


এবিপি আনন্দকে একান্ত সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী ও কসবার তৃণমূল বিধায়ক জাভেদ খান বলছেন, ''বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে কি হয়নি সেটা পরের কথা। নেওয়া হল কেন? কারা নিয়েছে, এর পিছনে কী চলছে, আর্থিক কোনও ব্যাপার আছে, সেটা তদন্ত করে পার্টিতে দেখা উচিত।'' তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্য়ালঘু সেলের সভাপতি ও বিধায়ক মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন, ''এই সেলে আগে একটা পকেট কমিটি বা একটা পদ বাণিজ্য ছিল আগে। অনেক আগে।পদ বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য দল এগুলো বরদাস্ত করে না।"

তৃণমূলে কি টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রি হয়? এখানেও কি ফ্য়াক্টর সেই কাঞ্চন? এই জল্পনা উস্কে দিলেন খোদ মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য়, বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী ও কসবার বিধায়ক জাভেদ খান। এর আগে সুশান্ত ঘোষের ওপর হামলার জন্য ব্যবসায়ী জুলকারের দিকে আঙুল উঠেছিল। তখন জুলকার বলেছিলেন তিনি জাভেদ খানের হয়ে কাজ করেছেন। সুশান্ত ঘোষের হয়ে ভোট করিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে জাভেদ খান বলছেন, ''জুলকার আমার পার্টির কোনও পদে ছিল না। সে বিজেপি করেছে। সে ISF করছিল। আমার ইলেকশনে ISF করেছে। লোকসভা ইলেকশনে আবার দেখলাম তৃণমূল করছে। তার আগে বিহারে এসে পঞ্চায়েত প্রধানের ইলেকশন লড়েছে বিজেপির হয়ে। আবার সমাজবাদী পার্টি করেছে। ও রোজ পার্টি করে। এরমধ্যেই দেখলাম আমাদের পার্টির মাইনরিটি সেলের সম্পাদক ঘোষিত হল। এমএলএ আছে তাঁকে জিজ্ঞেস করবেন না, কাউন্সিলর আছে, তাঁকে জিজ্ঞেস করবেন না। কে বা করা করেছে এটা তদন্ত হওয়া দরকার পার্টির থেকে। যার নামে ১০০-১৫০ কেস থাকে সে সাধারণ সম্পাদক হয় মাইনরিটি সেলের, এটা বাঞ্চনীয় নয়। এটা আমি মেনে নিতে পাারি না।''


এই জুলকারের আগেই দাবি করেছিলেন তিনি তৃণমূলের রাজ্য সংখ্য়ালঘু সেলের সম্পাদক। ২০১৯-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি তৃণমূলের রাজ্য সংখ্য়ালঘু সেলের সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে তাঁকে। নিয়োগপত্রের নীচে সই রয়েছে প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদ হাজি শেখ নুরুল ইসলামের। আবার ২০২৪-এর ১৬ মার্চ - ফের তাঁকে তৃণমূলের রাজ্য সংখ্য়ালঘু কমিটির সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়। যেখানে সই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ও ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেনের। এই প্রেক্ষাপটেই সামনে এসেছে এখন একটি চিঠি। যেখানে, চলতি বছরের পয়লা অগস্টের তারিখে মহম্মদ জুলকার নাইম আলির উদ্দেশে লেখা হয়েছে, ''আপনার নামে অনেকগুলি মামলা থাকায় আপনাকে যে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্য়ালঘু তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক পদে সাময়িক যে পদ দেওয়া হয়েছিল তা আজ থেকে বহিষ্কার করা হল।''