কলকাতা: সঙ্গীত জগতে ফিউশন কথাটা শোনা যায়। তাই বলে সন্দেশের ফিউশন!
মিষ্টির সাম্রাজ্যে এমনই অভিনব কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে শতাব্দী প্রাচীন ভীম নাগ'স ব্রাদার শ্রীনাথ নাগ। এবিপি আনন্দ খাইবার পাসে (Khaibar Pass 2022) যারা এবার পা রাখতে চলেছে। আর অভিষেকেই যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রে নিজেদের মেলে ধরতে প্রস্তুত এই ঐতিহ্যশালী মিষ্টি প্রস্তুতকারী সংস্থা।
ভীম নাগ'স ব্রাদার শ্রীনাথ নাগের অন্যতম কর্ণধার রূপা নাগ বলছেন, 'এখন সুগার ও ফিগার কনসাস যুগে কীভাবে সন্দেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায় ও সন্দেশের ফিউশন ঘটানো যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছি আমরা। আমাদের তৈরি সন্দেশে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। এবিপি আনন্দ খাইবার পাসে দিলখুশ, আবার খাব, প্রাণহারা, মনোহরা, বসন্ত বাহার, পারিজাত, প্যারাডাইস, রোজক্রিম থাকছে। এই পদগুলো প্রায় দেড় শতাব্দী ধরে বানিয়ে বিক্রি করছি। সবই জীভে জল আনা মিষ্টি। পাশাপাশি এবারের খাইবার পাসে আমাদের বিশেষত্ব নলেন গুড়ের মটকা মালাইকারি। রসগোল্লার ক্রাঞ্চকে ঘন দুধের মালাইতে ফুটিয়ে মটকাতে করে সার্ভ করা হচ্ছে। তার ওপরে থাকছে পিস্তাচিও।'
ভীম নাগ মানেই সন্দেশ। ১৮২৬ সালে ভীম নাগের বাবা পরাণচন্দ্র নাগ জনাই থেকে এসে বৌবাজারে মিষ্টির দোকান করেন। পরে ভীম নাগ সেই ব্যবসাকেই এগিয়ে নিয়ে যান। ভীম নাগের একমাত্র ভাই ছিলেন শ্রীনাথ নাগ। পরবর্তীকালে ভীম নাগ'স ব্রাদার শ্রীনাথ নাগ আলাদা সংস্থা হিসাবে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করে।
রূপা বলছেন, 'স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে আমরা জড়িয়ে রয়েছি। সেই কারণে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামেও রয়েছে সন্দেশ। নেহরু, সুভাষ, দেশবন্ধু আমাদের জনপ্রিয় কিছু সন্দেশ। সন্দেশের বাইরে গিয়ে রসের মিষ্টিও বানাচ্ছি। লেডিকেনি আমাদের বিশেষ আইটেম। পাশাপাশি ঐতিহ্যশালী ছানার পায়েস থাকছেন। যা কাঁচাগোল্লা থেকে তৈরি। খুড়ি করে সার্ভ করা হয়। খাইবার পাসে সবই থাকছে আমাদের অন্যতম আকর্ষণ হিসাবে।'
স্বাধীনতার পরে ১৯৬৬ সালে বৌবাজার থেকে বেরিয়ে কসবা, মনোহরপুকুর রোড, ভবানীপুর ও লেক মার্কেটে চারটি আলাদা দোকান করেন ভবানীচরণ নাগ। ভবানীচরণ নাগের মৃত্যুর পর ওঁর বড় ছেলে কানাইলাল নাগ ব্যবসার হাল ধরেন। এখন পরবর্তী প্রজন্মের হাতে ব্যবসার ভার। কসবা, এন্টালি, পাটুলি, কালিকাপুর, কসবা রথতলা ও পিকনিক গার্ডেনে দোকান হয়েছে। হিডকোয় মিষ্টি হাবে স্টলও রয়েছে।
রূপা বলছেন, 'খাইবার পাসে বেকড রসগোল্লা, বেকড চমচম, মিহিদানা তো রয়েইছে, সেই সঙ্গে আমরা এনেছি বেকড গোলাপজাম। বাদশাভোগ, মালাইভোগ আমাদের খুব ভাল কিছু আইটেম।' বাঙালি এখন শরীর সচেতন। রূপা বলছেন, 'আগে মিষ্টি তৈরিতে যে পরিমাণ চিনি ব্যবহার করা হতো, এখন তা অনেকটাই কমানো হয়েছে। যাতে শরীর সচেতন প্রজন্মও মিষ্টিবিমুখ না হয়।' যোগ করছেন, 'আমরা সাধারণ মানুষের কাছে থাকার চেষ্টা করি। ক্রেতাদের আব্দার মেনে পুরনো আমলের সন্দেশও বিয়েবাড়ি বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানের জন্য বানিয়ে দিই। দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করি। এখনও দশ টাকায় রসগোল্লা পাওয়া যায় আমাদের কাছে। দশ টাকা পিস সন্দেশ বিক্রি করি। ঠাকুরঘরে পৌঁছনোর জন্য প্যাঁড়া বিক্রি করি ৫-৬ টাকা পিস হিসাবে। লকডাউন ও কোভিড পরিস্থিতিতেও মিষ্টির দাম বাড়াইনি।'
দাম যাতে বাঙালির মিষ্টিপ্রীতিতে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারেও সচেতন ভীম নাগ'স ব্রাদার শ্রীনাথ নাগ।