কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: ঘুড়ি, লাটাই হাতে ছাদে ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে ব্যস্ত যুবক থেকে বড়রা। পিছিয়ে নেই মহিলারা। সঙ্গে চলছে রান্নাবান্না ও খাওয়া দাওয়া। পৌষ সংক্রান্তির (Makar Sankranti 2024) দিন মানেই বর্ধমানের ঘুড়ির মেলা। বইছে হুহু উত্তুরে হাওয়া,ছাদে ছাদে লাটাই হাতে ভিড়। আকাশে ঘুড়ি কাটলেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, কেটে যাওয়া ঘুড়ির পিছনে দল বেঁধে দৌড় আর সবাই মিলে বলে ওঠে 'ভোকাট্টা।' 


কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ির মেলা হলেও রাজ আমল থেকেই পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানো চল রয়েছে বর্ধমানে। বর্ধমান মহারাজা মহাতাব চাঁদের আমলে দেশ-বিদেশ থেকে নানা রঙের, নানা আকারের ঘুড়ি আনাতেন মহাতাব চাঁদ। এমনকি কারিগরদের নিয়ে এসে ঘুড়ি তৈরি করানো হতো রাজবাড়িতে। পৌষ সংক্রান্তির সকাল থেকে রাজবাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দে মেতে উঠতেন বর্ধমানের মহারাজা মহাতাব চাঁদ। রাজা বা সেই রাজ আমল না থাকলেও ঘুড়ি ওড়ানোর সেই প্রথা আজও পুরোমাত্রায় বজায় রয়েছে বর্ধমান শহরে।


একদিন নয়, তিনদিন ধরে চলে এই মেলা। প্রথমদিন বর্ধমান শহরে, দ্বিতীয়দিন বাহিরসর্বমঙ্গলা পাড়া এবং তৃতীয় দিনে সদরঘাটের মাঠে। ঘুড়ির মেলার জন্য প্রায় একমাস আগে থেকে শুরু হয় প্রস্তুতি। নানা উপকরণ দিয়ে সুতোয় মাঞ্জা দেওয়া হয়। এখন অবশ্য বাজারে সহজেই মেলে মাঞ্জাই সুতো। শহরের নানান জায়গায় পৌষ সংক্রান্তির অনেকদিন আগে থেকেই কাগজ ও প্লাস্টিকের রংবেরঙের ঘুড়ি পসরা সাজিয়ে বসে ব্যবসায়ীরা। ঘুড়ির মেলা মানেই ছুটির আমেজে মেতে ওঠে ছোটো থেকে বড়ো সকলেই। ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধব,পরিবারের সঙ্গে দিনভর চলে ছাদে রান্নাবান্না, পিকনিকও। এককথায় পৌষপার্বণ মানেই ঘুড়ি উৎসবে মেতে উঠে শহর বর্ধমান।


আরও পড়ুন, পোস্ট অফিসে ৪ কোটির দুর্নীতি, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতেই ডাক কর্মী বললেন..


একুশ সালে একটি মনে রাখার মতো ঘটনা ঘটিয়েছিল শহর কলকাতার ২ তরুণ। রাতের আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর ইচ্ছে ডানায় ভর করে মিলেছিল সাফল্য। এলইডি ঘুড়ি বানিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন কালীঘাটের বাসিন্দা ২ তরুণ। ভবিষ্যতে ঘুড়ি নিয়ে চলবে আরও গবেষণা, জানিয়েছিলেন তাঁরা।রাতের ঘন কালো আকাশ চিরে জ্বলন্ত তিরের মতো কিছু যেন ভেসে চলেছে। কখনও চক্কর খাচ্ছে, কখনও আকাশের একদিক থেকে অন্যদিকে সরে যাচ্ছে। কলকাতার কালীঘাট অঞ্চলের মানুষজনের মুখে মুখে ছড়াল রাতের আকাশের ওই অচেনা ছবি।  রাতের আকাশে আসলে ঘুরছিল একটি এলইডি (LED) ঘুড়ি। সবসময়ই ঘুড়ি নিয়ে কোনও না কোনও গবেষণা করতে ভালবাসেন কালীঘাটের ২ তুতো ভাই সোহম সরকার ও শৌর্য সরকার। তাঁদের ঘুড়ি প্রেমের উৎসাহ জুগিয়েছিলেন কাকা সৌমিক সরকারও।