আবির দত্ত ও ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা: কলকাতা পুরসভার ভোটে বোমাবাজি। বোমা পড়ল শিয়ালদায়। ভোট দিতে গিয়ে বোমার আঘাতে রক্তাক্ত হলেন ভোটার। কলকাতা পুরসভার ভোটে বোমাবাজি। ঝরল রক্ত।


ভোটের সকাল থেকেই কলকাতার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে চাপানউতোর চলছিলই। বেলা বাড়তেই টাকি বয়েজ স্কুলের সামনে রাস্তায় পরপর দু’টি বোমা ফাটে। গুরুতর জখম হন দুই ব্যক্তি। এক ব্যক্তির পায়ে মারাত্মক আঘাত লাগে। বোমাবাজির ঘটনায় মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ বাহিনী। ঘিরে ফেলা হয় গোটা এলাকা। ডিসি (ইএসডি) প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখছি, দুটো বোমা পড়েছিল।’


এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডেরই খান্না হাইস্কুলের সামনেও জোড়া বোমা পড়ে। বোমাবাজির নেপথ্যে কংগ্রেস ও বামেদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছে বাম ও কংগ্রেস। পাল্টা ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই প্রার্থী মৌসুমী ঘোষ বলেছেন, ‘বোমাবাজির রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই।’


বোমাবাজির ঘটনায় তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপিও। এই ঘটনার পরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। রুটমার্চ হয়।


বেলেঘাটায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আবার বোমাবাজির অভিযোগ তোলে তৃণমূল। যদিও পরে পুলিশের তরফে জানানো হয়, বেলেঘাটার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বোমাবাজির প্রমাণ মেলেনি।


কলকাতা পুরভোটে একের পর এক বিরোধী প্রার্থী আক্রান্ত। বিরোধী দলের এজেন্টরা আক্রান্ত। ঝরল রক্ত। আজ ভোটের একেবারে শেষলগ্নে ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে, দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন বিজেপি প্রার্থী রাজর্ষি লাহিড়ি। তাঁকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। মাথায় আঘাত লাগায় বিজেপি প্রার্থীকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।


ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছিল ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন কংগ্রেস প্রার্থী আকবর হোসেন। কংগ্রেস প্রার্থীর সঙ্গীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।


২১ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্ত হন বাম প্রার্থী সুজাতা সাহা। তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন।


খিদিরপুরে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থী ফৈয়জ আহমেদ খানের গাড়িতে হামলা হয়। অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় বাম প্রার্থীকে।


৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠকের এজেন্টকে বুথের মধ্যে ঢুকে মারধর করা হয়। পুলিশের সামনেই ঘটে সবকিছু। ভোট-সন্ত্রাস নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি এদিন বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস। সন্ধেয় প্রতিবাদ জানাতে চুড়ি ও ফুল নিয়ে ফের রাজ্য নির্বাচন কমিশনের যান কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। যদিও তাদের ভিতরে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।


কলকাতা পুরভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগে সোম ও মঙ্গলবার অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বামফ্রন্ট।


তৃণমূল অবশ্য বিরোধীদের এসব অভিযোগকে আদপেই গুরুত্ব দিতে নারাজ। 


এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়, দু’টি বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। একটি খান্না হাইস্কুলের সামনে। অন্যটি এপিসি ক্রসিংয়ের কাছে। তাতে তিনজন আহত। গ্রেফতার করা হয়েছে একজনকে। এছাড়াও জমা পড়েছে ৪৫৩টি অভিযোগ। তবে বুথ দখলের কোনও অভিযোগ কমিশনে জমা পড়েনি।