কলকাতা: তৃণমূলের কড়া বার্তার পরেও আসন্ন কলকাতা পুরভোটে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন না ২ বিক্ষুব্ধ। তৃণমূলের টিকিট না পেলেও, ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে জোড়া পাতা প্রতীকেই লড়বেন প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়। ৭২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবেই ভোটে লড়াই করবেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের বিরুদ্ধে নই, প্রার্থীর বিরুদ্ধে, দাবি করেছেন ২ নির্দল প্রার্থীই।


তিয়াত্তর নম্বর ওয়ার্ডে  তৃণমূলের নির্দল-অস্বস্তি ঘুচলেও  কাঁটা হয়েই রয়ে গেল ৭২ ও ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড।কোনও দৌত্যেই গলল না বরফ। শেষদিনেও মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন না  ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী ও প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়  এবং ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী, প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়।শনিবার আলিপুর সার্ভে বিল্ডিংয়ে গিয়ে ভোটের প্রতীক তোলেন দু’জনেই।


ফলে কলকাতা পুরসভার ৭২ ও ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে ঘাসফুলের সঙ্গে জোড়া পাতার লড়াই অবশ্যম্ভাবী।  সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,  মনোনয়ন দেওয়ার পরে অনেকে ফোন করেন, কথা বলেন মদন মিত্র, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু এখন এটা করলে মানুষের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। রতন কেন করল, জানি না।


এবার কলকাতা পুরসভার ভোটে পুরনো কাউন্সিলরদের ৩৯ জনকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল।সেই তালিকায় অন্যতম ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর ও কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়।টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন তিনি।অন্যদিকে, ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে, তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করা হয়।তিনি প্রচারেও নেমে পড়েন।কিন্তু পরে তাঁর কাছ থেকে দলীয় প্রতীক ফেরত নিয়ে বিদায়ী কোঅর্ডিনেটর সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়-কেই লড়তে বলে তৃণমূল।


দ্বন্দ্বের সূত্রপাত সেখান থেকেই।তনিমা চট্টোপাধ্যায় বলেছেন,  (সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এলাকার মানুষ চেয়েছিলেন আমি দাঁড়াই, সুব্রত চেয়েছিলেন সুদর্শনা যেন প্রার্থী না হয়।


৭২ ও ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে এখন তৃণমূল প্রার্থীদের সামনে নির্দল চ্যালেঞ্জ!! তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এদিনই পুরভোট বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দেন,যাঁরা টিকিট পাননি, তাঁরা যদি অশান্তি করেন বা দলকে হারানোর চেষ্টা করেন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।বিধায়ক তথা ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী   অতীন ঘোষ বলেছেন, যাঁরা নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন, দল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে, দলে থেকে যারা দল বিরোধী কাজ করবে, তাদের দল বহিষ্কার করবে।কলকাতা পুরভোটে নির্দলরা  তৃণমূলে ফ্যাক্টর হবে না বলেও দাবি করেন শাসক নেতা।


রাজ্যের মন্ত্রী তথা ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী  ফিরহাদ হাকিমও বলেছেন, নির্দল কোনও ফ্যাক্টর নয়, যাঁরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরা অন্যায় করেছেন। দলের আগে কেউ নয়।


যদিও ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী তনিমা চট্টোপাধ্যায়ের সাফ কথা, তিনি দলের বিরুদ্ধে নন। তিনি বলেছেন, আমি দলের বিরুদ্ধে নই, আমি প্রার্থীর বিরুদ্ধে, ফিরহাদ হাকিম বলতেই পারেন।


শেষপর্যন্ত নির্দল প্রার্থীরা খেলা কতটা ঘোরাতে পারবেন, সে উত্তর মিলবে আগামী ২১ ডিসেম্বর, কলকাতা পুরসভা ভোটের ফল ঘোষণা হলেই।


উল্লেখ্য, গতকালই মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ার ওয়ার্ডে কেটে যায় নির্দল কাঁটা। দু’দিনের মাথায় ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর রতন মালাকার। তৃণমূল প্রার্থী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূর কাছে গিয়ে ভুল স্বীকারও করেন।