ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা : মহানগরে বাড়ছে বিষবায়ু। স্মগ । বায়ুদূষণে এবার দিল্লিকে ছুঁতে বসেছে তিলোত্তমা। এমনকী কলকাতার কিছু এলাকার দূষণের মাত্রা রাজধানীর থেকেও বেশি ! এমনই ভয়াবহ তথ্য উঠে এল, ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ( Kolkata Air Quality Index )-এর পরিসংখ্যানে।


পরিবেশবিজ্ঞানী তপন সাহা বলেন , ' আমেরিকার একটা রিসার্চ রয়েছে, ৭ হাজার শহর নিয়ে গবেষণা করেছে। দূষণের নিরিখে ১ নম্বর দিল্লি। তারপরই কলকাতা। কী কারণে হয় সেগুলো বলেছে। নির্মাণকাজে কোনও রেসট্রিকশন নেই। গবেষণায় দেখা গেছে এত লক্ষ লোক এয়ার পলিউশনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সরকার এটা নিয়ে না ভাবলে কী হবে?'  


আরও পড়ুন : 


 'প্রত্যাশামতোই তাপমাত্রার ঝটিতি পতন ডিসেম্বরে, আরও ঠান্ডা পড়ার ইঙ্গিত


বাতাসে দূষণের পরিমাণ কতটা তা দেখা হয় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স দিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে,



  • এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা AQI  শূন্য থেকে ৫০ হলে, সেখানকার বাতাসের মান ভাল।  

  • AQI ৫১ থেকে ১০০-র মধ্যে হলে তা satisfactory বা সন্তোষজনক।

  • ১০১ থেকে ২০০ হলে তা মডারেট বা পরিমিত। 

  • AQI ২০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত থাকলে সেখানকার বাষুদূষণ poor বা খারাপ। 

  • এই বাতাসে বেশিক্ষণ থাকলে ফুসফুসের সমস্যা বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

  • ৩০১ থেকে ৪০০ পর্যন্ত পৌঁছে গেলে তা ভীষণই উদ্বেগের। এরকম জায়গায় বেশিক্ষণ নিঃশ্বাস নিলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে।

  • আর AQI ৪০১- ৫০০ হলে তা সিভিয়ার, মারাত্মক উদ্বেগের। 


সারা বছর AQI ২০০-র আশপাশে ঘোরাফেরা করলেও, শীতের সময় দূষণের মাত্রা বাড়ে।  গত ২ দিনে, কলকাতার অধিকাংশ জায়গায় দেখা যাচ্ছে, AQI ৩০০-র ওপরে। ভীষণই উদ্বেগের। সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডে তথ্য অনুযায়ী, 



  • বালিগঞ্জে বৃহস্পতিবার AQI-এর মাত্রা ছিল, ৩১৮

  • শুক্রবার তা ৩০৪

  • বিধাননগরে বৃহস্পতিবার ছিল ৩২৩

  • শুক্রবার, ৩০৩

  • যাদবপুরে বৃহস্পতিবার AQI-এর মাত্রা ছিল, ৩৩১

  • শুক্রবার, ৩১০

  • কলকাতার ফুসফুস রবীন্দ্র সরোবরে শুক্রবারের AQI ২৫৫

  • সবুজে সবুজ ভিক্টোরিয়ায় ৩২৩   


কলকাতার বাইরেও পরিস্থিতিটা উদ্বেগের



  • হাওড়ার ঘুসুরিতে, ৩৪৪। 



সেখানে, দিল্লির সবথেকে বেশি যে এলাকাগুলোতে, যেমন,



  • শাদিপুরে ৩৪৪

  • জাহাঙ্গিরপুরে ৩১৭

  • নেহরু নগরে ৩১৫

  • পঞ্জাবী বাগে ৩১৪। 


দিল্লি আর দূর নেই। এই প্রবাদ বাক্য দূষণের নিরিখে সত্য হয়ে উঠেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দিল্লিকে ছাপিয়ে গেছে। সবুজ চত্বরেও দূষণ। ভিক্টোরিয়া এলাকায় দূষণ কম থাকার কথা। সেখানে সবথেকে বেশি দূষণ। 


পালমনোলজিস্ট পার্থসারথি ভট্টাচার্য বলেন, 'দূষণ এত বেড়ে গিয়েছে উদ্বেগের কারণ। শুধু ফুফফুস নয়। দূষণ থেকে আরও সমস্যা হয়। ইনফার্টিলিটি আসে। ফ্যাটি লিভার। বোন ডেনসিটি কমে যাচ্ছে। ' 


রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, দূষণ কমাতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেমন, রাস্তায় জল ছেটানো। নির্মাণ চলছে, এমন এলাকা ঢেকে দেওয়া । 


পরিবেশবিদ নব দত্ত বলেন, ' পরিবেশ দফতর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ দফতর কী করছে? কেউ ঠিকমতো কাজ করে না। সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাস্তায় জল ছেটালেই দূষণ রোধ করা যাবে। ডিজেল গাড়ির ধোঁয়া, কনস্ট্রাকশন সাইট, সেগুলো ঢেকে রাখার নিয়ম রয়েছে। কোনও নির্দেশ মানা হয় না। আমরা এরকমও বলতে শুনেছি, আমাদের রাজ্যের না, পাশের রাজ্য থেকে দূষণ আমাদের রাজ্যে আসছে।' 


রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন। তাই এই সংক্রান্ত কোনও মন্তব্য করা হবে না।