অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কলকাতা: গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশ হোক বা বিদেশ, কমেডিয়ানরা বারবার খবরের শিরোনামে। সাম্প্রতিক যুদ্ধ সূচনার পর থেকেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বিশ্বের অন্যতম আলোচিত রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব। ২০১৮ র আগে অব্দি তিনি পুরোদস্তুর কমেডিয়ান ও অভিনেতা। ইউক্রেনে রমরমিয়ে চলেছে কমেডি টিভি সিরিজ servant of the people। সেখানে জেলেনস্কি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভূমিকায় এক অভিনেতা। সেই জনপ্রিয়তার পর সিরিজের নামেই ২০১৮ সালে রাজনৈতিক দল খুলে ফেললেন তিনি এবং বছর ঘোরার আগেই ২০১৯ এর মে মাসে দেশের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট।


সেদিক থেকে জেলেনস্কির মিল আছে ভগবন্ত সিং মানের সঙ্গেও। সম্প্রতি শিরোনামে তিনিও। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পাঞ্জাবের ক্ষমতা দখলের পরেই আম আদমি পার্টির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী হবেন মান। তবে অনেক আগে থেকেই পাঞ্জাবের ঘরে ঘরে ভগবন্ত সিং মান সুপরিচিত নাম। যে সময় ইউটিউব বা ফেসবুক ব্লগারদের ভিড় এতটা শুরু হয় নি, সে সময় থেকেই মান পাঞ্জাবের পরিচিত স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান। একটি জাতীয় স্তরের রিয়্যালিটি শোতে অংশ নেওয়ার পর তাকে চিনেছিল গোটা দেশই। 


তবে শুধু আন্তর্জাতিক বা জাতীয় স্তরে নয়, হাস্যরসের ইতিহাস তৈরি হল এই রাজ্যেও, কলকাতায়। শনিবার কলকাতা বইমেলায় (Kolkata Book Fair 2022) প্রথমবার হল বাংলায় স্ট্যান্ড আপ কমেডি পারফরম্যান্স। লিটল ম্যাগাজিন স্টলের একদম পাশেই শঙ্খ ঘোষ মঞ্চ। সেখানেই শনিবার দুপুরে কৌতুক বিনোদন করেন ছয় কমেডিয়ান। দলের নাম রয়্যাল বেঙ্গল কমেডি। বাংলা ভাষায় স্ট্যান্ড আপ কমেডিকে ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। আর বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে প্রথমবার তুলনামূলক নতুন এই বাংলা শিল্প মাধ্যমের জায়গা পাওয়াও বিরল ঘটনাই।


তবে মঞ্চে বাংলা কমেডির ইতিহাস অনেক পুরনো। আগে দেখে পাড়ায় পাড়ায় কৌতুকের চর্চা ছিল। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, রবি ঘোষ সহ অনেকের কৌতুকী ক্যাসেটে ক্যাসেটে বন্দী হয়েও পৌঁছে যেত ঘরে ঘরে। কিন্তু তারপর বেশ অনেকটা সমো বাংলায় এই শিল্পে কিছুটা হলেও ভাঁটা পড়ে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে হোক বা জলসায়, সেভাবে আর হাস্য কৌতুক পরিবেশনা বা কৌতুক শিল্পীদের  উপস্থাপনা চোখে পড়ত না। যদিও, দেশের মধ্যে মূলত হিন্দিতে এবং বিদেশে অন্যান্য ভাষায় এই শিল্পীদের বাজার রমরমা হয়ে উঠেছে ক্রমশ। কিন্তু বাংলা ভাষায় স্ট্যান্ড আপ কমেডি সেভাবে মঞ্চে মঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে নি। সেই ছবিরই বদল ঘটল,  বিভিন্ন মঞ্চ ঘুরে এবার স্ট্যান্ড আপ কমেডি হলো কলকাতা বইমেলায়।


দলের অন্যতম সদস্য শান্তনু মিত্র নিয়োগীর কথায়, "বইমেলায় শো করার ইচ্ছে অনেকদিন থেকেই ছিল কারণ একসাথে সমাজের বিভিন্ন স্তর ও ব্যকগ্রাউন্ড এর মানুষকে অডিয়েন্স হিসেবে পাওয়ার সুযোগ আর কোথায় পাবো? আর আমরা তো দেখি গান, আবৃত্তি, থিয়েটার সবরকম অনুষ্ঠানই বইমেলায় হয় কিন্তু স্ট্যান্ড আপ কমেডি আগে বইমেলায় হয়নি।  কারণ কমেডি কে শিল্প হিসেবে দেখার কথা সাধারণ মানুষ ভাবেনি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কমেডি তার বহুদিনের প্রাপ্য মর্যাদা পেল আজ এমনটা আমাদের মনে হয়েছে।"


কেমন হল বইমেলার প্রথম কমেডি পারফরম্যান্স? দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দিয়ে বিচার করলে সফল বলাই যায়। যেহেতু জায়গাটা বইমেলা, তাই সেই সংক্রান্ত রসিকতা তো ছিলই। সঙ্গে, কমেডির শর্ত মেনে রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ সহ দেশের রাজনীতিও উঠে এসেছিল শিলাদিত্য, সৌমিত, আকাশদের কথাবার্তায়। বইমেলার মানুষ ভিড় জমালেন। বই কিনলেন, আড্ডা মারলেন আর হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরলেন।