ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও সন্দীপ সরকার, কলকাতা: গার্ডেনরিচে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরেও ফেরেনি বহু মানুষের। এখনও কলকাতার বহু জায়গায় অবৈধ নির্মাণ চলছে রমরমিয়ে। পুরসভা অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার কিছু দিনের মধ্যে সেখানে ফের শুরু হচ্ছে বসবাস। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় অন্তর্তদন্ত চালিয়ে এমনই চাঞ্চল্য়কর ছবি উঠে এল এবিপি আনন্দর ক্য়ামেরায়।
সম্প্রতি মধ্যরাতে গার্ডেনরিচে ধসে পড়েছিল একটি পাঁচতলা নির্মীয়মাণ বাড়ি। ঝরে গিয়েছিল ১০টি প্রাণ। এখনও ধ্বংসস্তূপের তলায় কেউ আটকে রয়েছেন কিনা তার খোঁজ চলছে।
বহুতল দুর্ঘটনার পরেই প্রশ্ন উঠছে কীভাবে এই কাজ চলছে? কীভাবে পুলিশ-প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে এই কাজ? বেআইনি বহুতলের ক্ষেত্রে পুরসভা আগেই ব্য়বস্থা নেয়নি কেন? এর কারণ কি প্রোমোটার-পুরসভা যোগসাজশ? কলকাতাজুড়ে খোঁজ নিল এবিপি আনন্দ। তাতেই উঠে এল নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বাঘাযতীনের চিত্তরঞ্জন কলোনি:
এখানে একটি বাড়ি বেআইনি বলে ভেঙে দিয়েছিল খোদ পুরসভা। তা নিয়ে বিস্তর নাটকও হয়েছিল। ২০২৩ সালের ২৭ জুন, কলকাতা পুরসভার ডেমোলিশন স্কোয়াড এই বাড়িটি ভাঙতে গেলে সেই কাজে বাধা দেন তৃণমূলের কাউন্সিলর। বাড়িটি অর্ধেক ভেঙে ফিরতে হয় পুরকর্মীদের। কিন্তু, তারপর যা হয়েছে, তা আরও মারাত্মক। ছাদের ওপর চৌকো করে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে আবার ছাদ বানিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন ওই বাড়িতে লোকজন থাকেন। ওই বাড়ির প্রোমোটার দেবাশিস বিশ্বাসের দাবি, 'কর্পোরেশন যেভাবে বাড়ি ভেঙেছিল, বাড়ি সেই ভাবেই আছে। রিপিয়ারিং করা হয়েছে। রেগুলারাইজ করার জন্য মালিক গিয়েছিল। কিন্তু অনেক টাকা ফাইন লাগবে।'
একবালপুর থানা এলাকার ইব্রাহিম রোড:
এখানেও দেখা গিয়েছে এক ছবি। কলকাতা পুরসভার ৭৮ ওয়ার্ডে কিছুদিন আগেই একটি বহুতল তৈরি হয়। স্থানীয়দের দাবি, বহুতলের একাংশকে অবৈধ বলে, ছাদ ফুটো করে দিয়ে যান পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকরা। তারপরেও সেই বাড়ির ছাদ মেরামত করে অনেকে দিব্য়ি থাকছেন বলে অভিযোগ।
অনিয়মের ছবি ধরা পড়েছে কবিরাজ বাগানের হরিশ নিয়োগী রোডেও। কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বহুতলের তৃতীয় তলাটি অবৈধ ভাবে তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়ে সেখানে ফুটো করে দিয়ে যান পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের কর্মীরা। কিন্তু সেই বাড়ি আবার ঢালাই করা হয়েছে। অভিযোগকারী রঞ্জিত গোস্বামী বলেন, 'আমাকে অন্ধকারে রেখে বেআইনি নির্মাণ, বাড়ির ছাদ আবার ঢালাই করা হয়েছে।' ওই এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী বলেন, 'অবৈধ হয়ে থাকলে কী ভাবে হয়েছে আমি জানি না।' পুরসভা বেআইনি বলে ভেঙে দেওয়ার পরও এসব বাড়িতে লোকজন থাকছে কীকরে? স্থানীয় কাউন্সিলরদের অজান্তে কি এটা সম্ভব? পুরসভা কি দেখেও চোখ বুজে রয়েছে?
আরও পড়ুন: প্রথমবার UPSC দিয়েই সারা ভারতে ব়্যাঙ্ক ৯৪, কীভাবে সফল হলেন তমালি?