অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কলকাতা : কোভিডের ধাক্কায় কমেছে বেসরকারি বাসের সংখ্যা। এবার দোসর ১৫ বছরের পুরনো বাস বন্ধের হাইকোর্টের নির্দেশ। জোড়া ফলায় এবার কলকাতার রাস্তায় তৈরি হতে চলেছে বাসের সঙ্কট। এই পরিস্থিতিতে ১৫ বছরের পুরনো বাস বন্ধের নির্দেশের বিরুদ্ধে এবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে একাধিক বাস মালিক সংগঠন। 


বয়সের ভারে জরাজীর্ণ অবস্থা একাধিক বেসরকারি বাসের। অচল সেইসব বাস থেকে ছড়াচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ। পরিবেশ রক্ষায় তাই হাইকোর্টের নির্দেশে আর চালানো যাবে না ১৫ বছরের পুরনো বাস।


২০০৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে চলতি বছরে বসতে শুরু করেছে একাধিক বেসরকারি বাস। আর এতেই কলকাতার রাস্তায় বাসের সঙ্কট তৈরি হতে চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, আগে শহরের রাস্তায় ৪ হাজার ৮৪০টি বাস চলত। কোভিডকালের পর সংখ্য়াটা ৩ হাজার ৬১৫-তে নেমে এসেছে। মিনি বাস চলত মিনি ২০৬৪টি। সেই সংখ্য়াও কমে হয়েছে ১৪৯৮টি।

শহরের বাস মালিক সংগঠনগুলোর দাবি, জ্বালানির মূল্য়বৃদ্ধি সহ নানা কারণে বর্তমানে ১০টি বাস বসে গেলে তার পরিবর্তে মাত্র ৩টি নতুন বাস পথে নামছে। হিসেব বলছে, আগামী বছরের মার্চের মধ্য়ে ১২০০ বাস ও মিনি বাস বসে যেতে চলেছে। ধাপে ধাপে এত বাস বসে গেলে কলকাতার রাস্তায় হঠাৎ বাসের ভয়ঙ্কর সঙ্কট দেখা দেবে।


অল বেঙ্গল বাস-মিনি বাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, "২০০৯ সালের পরে যে গাড়ির সংখ্যা ছিল সেটা কমছে। ২০১৮ সালের পর থেকে সেটা আরও বেশি করে কমতে শুরু করে। তার প্রথম ও প্রধান কারণ হচ্ছে আয় ও ব্য়য়ের মধ্য়ে সামঞ্জস্য় না থাকা। + মানুষ যারা ব্য়বসার সঙ্গে যুক্ত উৎসাহে ভাটা পড়েছে। যে পরিমাণে বাস বসে যাচ্ছে সেই পরিমাণ বাস নামতে হবে। কিন্তু, সেই পরিমাণ বাস নামছে না। কিন্তু, কেউ নতুন বাস-মিনি বাস রাস্তায় নামানোর ঝুঁকি নিচ্ছেন না। এর ফলে বাসের সংখ্যাটা দিনে দিনে কমছে।"

রাজ্য় সরকারের কাছে ১৫ বছরের পরিবর্তে বাসগুলো বসিয়ে দেওয়ার মেয়াদ ২০ বছর করার আর্জি জানাতে চলেছে বাস সংগঠনগুলো।


সিটি সাবারবান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, "যখন ২০০৯ সালে গাড়িগুলো বাতিল হয়েছিল তখন যে সমস্ত মডেলের গাড়ি চলত সেই মডেলের গাড়িগুলো এখন আর নেই। এখন ইউরো ফোর, ইউরো সিক্স গাড়ি যেগুলো কম দূষণ ছড়ায়। সুতরাং ২০০৯-এর নির্দেশকে কার্যকর করে রাখার কোনও কারণ আছে বলে আমরা মনে করি না। সে ব্য়াপারে রাজ্য় সরকারের সঙ্গে আমরা চিঠি দিয়েছি এবং আলোচনা করেছি। রাজ্য় সরকার আপিলে যাচ্ছে। আমরা রাজ্য় সরকারের কাছে আবেদন করব। ১৫ বছরের গাড়িকর আয়ুকাল যাতে ২০ বছর করা যায়।"

শহরের বাস মালিক সংগঠনগুলোর দাবি, রাজ্য় সরকার তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছে এনিয়ে আদালতে যাবে। তবে এখনও আদালতে যায়নি রাজ্য়। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের মধ্য়ে বৈঠক করে বাস মালিক সংগঠনগুলোই হাইকোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।