সত্যজিৎ বৈদ্য, কলকাতা: ফের প্রাণ কাড়ল অ্যাডিনো ভাইরাস (Adinovirus)। রাজ্যে ফের মৃত্যু এক  শিশুর (Child Death)। বিসি রায় হাসপাতালে (BC Roy Hospital) মৃত্যু হল ১১ মাসের শিশুর।  পরিবার সূত্রে খবর, জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে ভুগছিল শাসনের বাসিন্দা ওই শিশুটি। গত রবিবার বিসি রায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় শিশুটি। 


স্বাস্থ্য় দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসে, রাজ্য়ের সরকারি হাসপাতালে অ্য়াডিনো আক্রান্ত হয়ে মৃত্য়ু হয়েছে ১২ শিশুর। তারমধ্যে বেশ কয়েক জনের কোমর্বিডিটি ছিল।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,'আমি ১২টা কেসের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি, ২ টো অ্যাডিনো ভাইরাস। আর ১০টা কেস হচ্ছে, ধরুন কারও হয়ত সেপসিস হয়েছে, কারও হয়ত রিপিটেড অ্যাটাক হয়েছে, যাকে আমরা অ্যাডিনো ভাইরাস বলছি। একটি কেস হয়েছে বসিরহাট, কলকাতার চিত্তরঞ্জনে। বাদবাকিগুলি নানারকম উপসর্গ আছে, কোনওটা ওয়েট কম, বেশিরভাগ এগুলিই। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।'অপরদিকে,  অ্যাডিনো উদ্বেগে চালু করা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন নম্বর। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee)।  মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, 1800313444222 ২৪ ঘণ্টার জন্য এই হেল্পলাইন নম্বর চালু থাকবে। 


সম্প্রতি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কোভিডের সময় যেভাবে কাজ করা হয়েছে, এক্ষেত্রেও যেন সেই রকম ব্যবস্থা করা হয়। অক্সিজেনের অভাব যাতে না হয় সেই বিষয়ে নজর রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ১০ দফা অ্যাডভাইসরি জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে বলা হয়েছে, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি আক্রান্ত শিশুদের জন্য ২৪ ঘণ্টার ক্লিনিক করতে হবে। যে যে হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে শিশু বিভাগ আছে, সেখানে আলাদা আউটডোর চালু করতে হবে। যাতে সাধারণ বর্হিবিভাগে এইসব রোগীকে অপেক্ষা করতে না হয়। হাসপাতাল প্রধান বা অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি আক্রান্ত শিশু রোগীদের রেফার করা যাবে না। ভেন্টিলেটর ও অন্য সামগ্রী প্রস্তুত রাখতে হবে। শিশু বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকা জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে লাগাতে হবে। শিশুদের জনবহুল এলাকায় না নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মাস্ক ব্যবহার করতে। হাসপাতালগুলিকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ৫টি হাসপাতালকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের থেকে পরামর্শ নিতে হবে।বেসরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।


আরও পড়ুন, গরমের সঙ্গে বাড়ছে অস্বস্তি, ফাল্গুনেই গ্রীষ্মের অনুভূতি


তবে রাজ্যের যাবতীয় প্রস্তুতির আগেই খালি হচ্ছে একের পর এক মায়ের কোল। কলরব হাসপাতালে। অ্যাডিনো-আতঙ্কের মধ্যে বি সি রায় হাসপাতালে  অবধি ইতিমধ্য়েই ৩ শিশুর মৃত্য়ু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্য়াল কলেজে মৃত্য়ু হয়েছে ১ শিশুর। এই নিয়ে গত ২ মাসে মৃত শিশুর সংখ্য়া বে়ড়ে দাঁড়াল ৫০। বুধ-বৃহস্পতি ২ দিনে, বি সি রায় হাসপাতালে মৃত্য়ু হয়েছে ৭ জনের। বৃহস্পতিবার সকালে, বি সি রায় হাসপাতালে মৃত্যু হয় ভাঙড়ের বাসিন্দা, ৩ মাসের এক শিশুকন্যার। জ্বর-শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ICU-তে চিকিৎসা চলছিল তার। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ভোরেই বি সি রায় শিশু হাসপাতালে মৃত্য়ু হয় হুগলির খানাকুলের বাসিন্দা, সাড়ে ৩ বছরের শিশুকন্য়ার। মঙ্গলবার থেকে PICU-তে ভর্তি ছিল সে। মৃত্য়ুর কারণ নিউমোনিয়া বলে উল্লেখ রয়েছে ডেথ সার্টিফিকেটে।