প্রকাশ সিনহা ও শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা: সারদা-রোজভ্যালির মতো একাধিক চিটফান্ড নিয়ে প্রবল তোলপাড় হয়েছে রাজ্য। একাধিক গ্রেফতার হয়েছে, ধরা পড়েছে চিটফান্ডের মালিকরা। এখনও তদন্ত চলছে। কিন্তু এখনও টাকা ফেরত পাননি প্রতারিতরা। এই বিষয়টি নিয়ে রাস্তায় নামছেন তাঁরা। চিটফান্ড প্রতারিতদের এমনই একটি সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়েছিলেন উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি কল্যাণ চৌবে। সেখানেই বিক্ষোভের মুখে পড়লেন তিনি। চিটফান্ড সাফারার্স ইউনাইটেড ফোরামের ডাকে সোমবার দুপুরে ধর্মতলায় একটি প্রতিবাদ সভা ছিল। সেখানে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন আইনজীবী ও সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের হাজারখানেক সদস্য। ওই সভাতেই আমন্ত্রিত ছিলেন বিজেপির উত্তর কলকাতা সভাপতি কল্যাণ চৌবে। সেখানে বক্তব্যও রাখেন তিনি।


কোথায় সমস্যা?
স্থানীয় সূত্রে খবর, বক্তব্য রাখার সময় সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। কেন্দ্রীয় প্রকল্প রাজ্যে কার্যকর হতে না দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলেন। এমন বিষয় নিয়ে বলা শুরু করতেই বিরোধিতা শুরু হয় শ্রোতাদের দিক থেকে। নানাভাবে বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়। বিক্ষোভের মধ্যেই বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবেকে মঞ্চ থেকে নামতে বলা হয় বলে অভিযোগ। কেন এই বিরোধিতা? সংগঠনের এক সদস্যের অভিযোগ, 'রোজভ্যালিতে টাকা রেখেছিলাম। এখানে কবে টাকা ফেরত পাব জানতে এসেছি। রাজনৈতিক জ্ঞান নিতে আসিনি। উনি রাজনৈতিক জ্ঞান দিচ্ছেন।' সমস্যা এমন জায়গায় পৌঁছয় যে সংগঠনের নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। চিটফান্ড সাফারার্স ইউনাইটেড ফোরামের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে সবাই তাঁদের বক্তব্য রাখতে পারবেন। কিন্তু সেই বক্তব্য নিয়ে কোনও দায়িত্ব নেবে না সংগঠন।


উত্তর কলকাতার বিজেপির সভাপতি কল্যাণ চৌবের অভিযোগ, 'শাসকদলের বিরুদ্ধে কর্মসূচি। শাসকদলের যাদের অসুবিধা, তারাই এসেছিল। তাঁরা আমার বিরুদ্ধাচরণ করতেই পারেন। কিন্তু আমি আমার কথা বলবই। এখানে রাজ্য সাহায্য করে না বলেই সিবিআই তদন্ত এগোয় না।'


কোথায় দাঁড়িয়ে সারদা তদন্ত:
২০১৪ থেকে চলছে সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্ত। ৮ বছর হয়ে গিয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, সারদাকাণ্ডে এখনও অবধি ৭টা চার্জশিট জমা পড়েছে। দেড় বছর আগে CGO কমপ্লেক্স থেকে চূড়ান্ত চার্জশিটের একটা খসড়া দিল্লির সদর দফতরে পাঠানো হয়। তারপর সবুজ সঙ্কেত আসেনি। সারদা মামলায় এখন সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায় জেলবন্দি। বাকি সব ধৃতরাই জামিনে মুক্ত হয়েছেন।


রোজভ্যালি মামলার হালহকিকত:
একই হাল রোজভ্যালি মামলারও। ২০১৪ থেকে মামলার তদন্ত করছে CBI-ED। এই মামলার তদন্তেরও ৮ বছর হয়ে গিয়েছে। রোজভ্যালি-মামলায় সিবিআই ৪টে এবং ইডি ৩টে চার্জশিট দিয়েছে। চূড়ান্ত চার্জশিট এখনও জমা পড়েনি। এই মামলায় বর্তমানে জেলে রয়েছেন শুধু রোজভ্যালি কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু ও তাঁর স্ত্রী। 


সিবিআই তদন্তে কোনও গতি নেই, বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে বলেই অভিযোগ করেন আইনজীবী ও সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সোমবার চিটফান্ড সাফারার্স ইউনাইটেড ফোরামের একটি প্রতিনিধিদল দুপুরে রাজভবনে ডেপুটেশন জমা দেয়।


আরও পড়ুন: প্রাক্তনের নিশানায় বর্তমান, তৃণমূলের অন্দরে কি দ্বন্দ্ব?