কলকাতা : শুক্রবার ভয়াবহভাবে কেঁপে ওঠে মায়ানমার। রিখটার স্কেলে ৭ এরও বেশি মাত্রা। তীব্রতা অনুযায়ী ভূমি কম্পকে চারভাগে ভাগ করা হয়৷ রিখটার স্কেলে ৪.৯ মাত্রা পর্যন্ত বলা হয় মৃদু কম্পন৷ ৫ থেকে ৬.৯ মাত্রা পর্যন্ত বলা হয় মাঝারি কম্পন৷ ৭ থেকে ৭.৯ মাত্রা পর্যন্ত বলা হয় তীব্র ভূমিকম্প৷ ৮ মাত্রার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র কম্পন৷ অর্থাৎ মায়ানমারের কম্পন ছিল তীব্র কম্পন, যার অভিঘাত পড়েছিল কলকাতাতেও। এখন প্রশ্ন কলকাতা কতটা ভূমিকম্প প্রবণ। উন্নতশির বহুতলের অরণ্যের মাঝে কতটা নিরাপদ এ শহরবাসী? যে কোনওদিন কি নড়ে যেতে পারে এ শহরের পায়ের তলার মাটিও? ভাঙন ধরতে পারে আমাদের স্বপ্নের ইমারতে ? কী বলছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা।
নড়ে যেতে পারে এ শহরের পায়ের তলার মাটিও?
আগে জেনে নেওয়া যাক কেন হয় ভূমিকম্প । মাটির এতি গভীরে তরল ম্যাগমার যে স্তর আছে, তার ওপর ভাসমান দু’টি মহাদেশীয় প্লেটের স্থান পরিবর্তনের সময় প্লেটগুলির কিনারায় প্রবল পীড়নের সৃষ্টি হয়। পীড়ন যখন বড়সড় চ্যুতির সৃষ্টি করে এবং এর অন্তর্নিহিত শক্তি বের করার চেষ্টা করে, ঠিক তখনই কেঁপে ওঠে ভূপৃষ্ঠ। কলকাতা এই দিক থেকে ঠিক কোন অবস্থানে ?
GSI-র ডেপুটি ডিরেক্টর শৈবাল ঘোষ জানালেন, কলকাতা শহরের উত্তরের দিকে গেলে উত্তরবঙ্গে হিমালয় পর্বতাঞ্চলে কিন্তু বেশ ভূমিকম্প প্রবণ। এবার সেখানে যদি ভূমিকম্প হয়,তার প্রভাবে কলকাতাও কেঁপে উঠবে বৈকি। অতীতেও বহুবার উত্তরবঙ্গ, নেপাল , সিকিম, ইত্যাদি জায়গার ভূকম্পনের প্রভাব পড়েছে এ শহরে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা বলছে কলকাতা শহরও সাইসমিক রিস্ক বা কম্পনের ঝুঁকি থেকে দূরে নেই। এখানে হয়ত ৭.৭ বা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হবে না কিন্তু যেখানে হবে, তার প্রভাব আসবে কলকাতায়। ক্ষতিও হবে। এবার কোথায় বেশি ক্ষতি হতে পারে, কোথায় কম, তা নিয়ে একটি সমীক্ষা আইআইটি খড়গপুর ২০১৫ সালে করে। সেই অনুসারে কলকাতা ভূমিকম্পের ঝুঁকির বাইরে নয়। সাইসমিক জোন ম্যাপে ৪ টি ভাগ রয়েছে। ২,৩,৪,৫। সব থেকে কম ঝুঁকিতে আছে জোন২ । সবথেকে বেশি ঝুঁকিতে আছে জোন ৫। কলকাতা রয়েছে ৩ ও ৪ এর বর্ডার লাইনে। তাই ভূমিকম্পের ঝুঁকির বিষয়টি মোটেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।
কোথায় ঝুঁকি সবথেকে বেশি?
এছাড়া কলকাতায় বহু বহুতল। ভূমিকম্প হলে যে সব বাড়ি ধসে পড়ে , এমন তো নয়। তা অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তাই ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে গেলে বহুতল নির্মাণের সময় নির্দিষ্ট নিয়ম আর্কিটেক্টদের খেয়াল রাখতে হবে। নিয়ম না মানলে যে সব জায়গায় জলা জমি ভরাট করে বহুতল হয়েছে, কিংবা বড় রাস্তার সঙ্গে বাড়ির দূরত্ব কম অথবা পুরনো বাড়ি ঠিকমতো মেরামতি হয় না, সে সব জায়গায় ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা সবথেকে বেশি।