সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : 'প্রথমে মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। বড় বড় কংক্রিটের চাঙড় ভেঙে আশপাশের ঝুপড়ির ওপর পড়তে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে ধুলোয় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। প্রায় ৭ মিনিট ধরে চলে ধুলোর ঝড়।' দুঃস্বপ্নের রবিবার। ভয়াভহ রাত। গার্ডেনরিচের বাসিন্দারা এখনও ভাবলেই শিউরে উঠছেন। আর তাকাচ্ছেন আশেপাশের বাড়িগুলোর দিকেও। সেখানেও কোনওটার হেলে পড়ছে ছাদ, কোনওটায় ফাটল। 

গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল বিপর্যয়ের ঘটনায় সামনে আসছে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, জলাজমি বুজিয়ে কয়েক মাস ধরে তৈরি হচ্ছিল এই বহুতল। সংকীর্ণ গলির মধ্যে এল-শেপের ৫ তলা বাড়ি উঠেছিল লম্বালম্বিভাবে।  স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রথমে ৪ তলা নির্মাণ হয় জলা জমি বুজিয়ে। তারপর হঠাৎই প্রোমোটার আরেক তলা তুলে দেয়। তখন স্থানীয়রা আপত্তি জানালেও লাভ হয়নি। 


বেআইনি নির্মাণ নিয়ে এলাকার মানুষ আপত্তি জানালেনও, কর্ণপাতই করেননি প্রোমোটার। থানায় অভিযোগ করা হয়েছে ? এক স্থানীয়র জবাব, কে অভিযোগ করবে, করলে আমাকেই মেরে দেবে ! 


ঘিঞ্জি এলাকা। গায়ে গায়ে ঝুপড়ি, বাড়ি। বহু মানুষের বাস গার্ডেনরিচের আজহার মোল্লা বাগানের ফতেপুর ব্যানার্জি পাড়া লেনে। পুলিশ-প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কীভাবে বেআইনি নির্মাণ হল, প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 


বেআইনি নির্মাণের একপ্রকার মেনেই নেন কলকাতার মেয়রও। রাত থেকে এলাকায় রয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। জানালেন, প্রোমোটারকে গ্রেফতার করার কথা বলেছেন পুলিশকে। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, এখন আইনি পথে বাড়ি তৈরিতে তো বিরাট কাঠ-খড় পোড়াতে হয় না, মুখ্যমন্ত্রী বহু মানুষকে বাংলার বাড়িও করে দিচ্ছেন। তা সত্ত্বেও এমন নির্মাণের কী প্রয়োজন, প্রশ্ন তুলেছেন ফিরহাদ। তাঁর দাবি এই সব বেআইনি নির্মাণ তৈরির ট্রাডিশন বাং আমলের। পাশাপাশি, স্বীকার করলেন নজরদারির অভাব ছিল পুরসভার তরফেও। দায় চাপালেন পুরসভার আধিকারিকদের ঘাড়ে। নিহতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন মেয়র, একইসঙ্গে প্রোমোটারকে গ্রেফতারের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।


অন্যদিকে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্যুইট করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি লেখন, 'গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ তলা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ওই এলাকা মেয়র ও পুরমন্ত্রীর তথাকথিত দুর্গ বলে পরিচিত। হতাহতর সংখ্যা নিয়ে একের পর এক ফোন আসছে। দুর্গতদের উদ্ধারে অবিলম্বে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী পাঠান। '  


আরও পড়ুন : কলকাতায় বাড়ি ভেঙে বিরাট দুর্ঘটনা, চোখ রাখুন লাইভ আপডেটে।