কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা : মানুষ যাদের কাছ থেকে কাজের আশা করে, তাদের কাছেই ক্ষোভ জানাবে। গ্রামে গ্রামে 'দিদির দূত'দের (Didir Doot) ক্ষোভের মুখে পড়া নিয়ে, এই মন্তব্য করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। বরং ক্ষোভের মুখে পড়ে বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে আবার কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে জনসংযোগ বাড়াতে 'দিদির সুরক্ষাকবচ' কর্মসূচিতে এলাকায় এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন দিদির দূত-রা। নেতা থেকে মন্ত্রী-সাংসদ...সকলেই। আর যেখানেই যাচ্ছেন, কার্যত সেখানেই পড়ছেন ক্ষোভের মুখে। ছোট-বড় নেতা থেকে হেভিওয়েট...স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ মুখের সামনেই উগরে দিচ্ছেন ক্ষোভ ! যাকে নিত্য়দিন হাতিয়ার করে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে বিরোধীরা।
আর এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যেই , মানুষের এই ক্ষোভ ঘিরে অন্য় কৌশল নিল তৃণমূল। গত ১৬ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, আমাদের লোকেরা যারা যাবে দিদির সুরক্ষা কবচ প্রোগ্রাম নিয়ে আপনার যদি কোন প্রবলেম থাকে আপনি নিশ্চয়ই বলবেন।
কী বললেন অভিষেক ?
সেই সুরেই এবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, এই এই সমস্যা আছে, সেগুলি জানাবে না ? নিশ্চয়ই জানাবে। মানুষ তৃণমূলকে বিশ্বাস করে, তাই জানিয়েছে। মানুষের ক্ষোভ আমাদের কাছে আশীর্বাদ, ভালবাসা। দিদির দূতদের বলব, এতটুকু বিচলিত হবেন না। আমরা মানুষের জন্য কাজ করে যাব। এটা কোনও ক্ষোভ নয়।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বাংলায় তৃণমূলকে টক্কর দিয়েছিল বিজেপি। সেই সময় গ্রামবাংলায় প্রবলভাবে সামনে এসেছিল কাটমানি-কেলেঙ্কারি ! এই প্রেক্ষাপটে সরকারের ভাবমূর্তি ফেরাতে - 'দিদিকে বলো', 'বাংলার গর্ব মমতা'র মতো প্রকল্প চালু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। '২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে ঘোষণা করা হয় 'বাংলা নিজের মেয়েকে চায়'। 'দুয়ারে সরকার' কর্মসূচিও। যা ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে ডিভিডেন্ড দিয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।
এই প্রেক্ষাপটে, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের মুখে 'দিদির সুরক্ষাকবচ', 'দিদির দূত'-এর মতো কর্মসূচির মধ্য়ে দিয়ে যেভাবে মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে, তা আদতে তৃণমূলের অস্বস্তি, না কি সেফটি ভাল্ভ কৌশল, তা নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যা কার্যত স্বীকার করে নিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে নিশানা করলেন বিজেপিকেও।
অভিষেক বললেন, "আমরা '২১-এ জিতেছি, '২২-এ আবার তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। আমরা ভোটপাখি নই। ওদের ২০ জন সাংসদ, কাউকে দেখতে পাবেন না। একজন সাংসদ দিল্লিতে ফূর্তি করে বেরান, তাঁকে ক্ষোভের কথা জানাবে কী করে ? কেন মানুষের কাছে যাব না ? তাদের ভোটে জিতেছি। মানুষের জন্য প্রতি পদে কাজ করতে বধ্যপরিকর। আমরা দিল্লির বাবুদের কাছে মাথা নিচু করব না, বাংলার মানুষের কাছে করব। তাই তৃণমূলের কাছে মানুষ ক্ষোভ জানাচ্ছে। আমি নিজে দিদির সুরক্ষাকবচ করব।"
পঞ্চায়েত ভোটে ভোটবাক্সে কোন দলের প্রতি ক্ষোভ-আর কার প্রতি প্রতি ভালবাসা, ভোটাররা উগরে দেবে, সেটাই আসল প্রশ্ন।
আরও পড়ুন ; 'মুমুর্ষু রোগীকে ফেরালে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করা হবে' হুঁশিয়ারি অভিষেকের