সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা: হাজার পার করেছে রান্নার গ্যাস। এবার গরিব, নিম্নবিত্ত, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে কলকাতায় কেরোসিনের (Kerosine) দামেও সেঞ্চুরি পার! হেঁশেল চালাতে গিয়ে বিপাকে অসংখ্য পরিবার। শেষ পর্যন্ত কী কয়লা আর ঘুঁটের উনুনে ফিরতে হবে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে? উঠছে প্রশ্ন।


দামের আগুনে পুড়ছে পেট্রল! অগ্নিমূল্য ডিজেল। ঘরোয়া রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম হাজার টাকা ছাড়িয়েছে অনেকদিন। তার সঙ্গে রয়েছে লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির দুর্ভোগ। সংসার চালাতে সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষের যখন হাঁসফাঁস অবস্থা তখন কলকাতায় গরিবের কেরোসিনের দামও লিটারে সেঞ্চুরি পার করে ফেলেছে! সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, গত ৭ মাসে কেরোসিনের দাম লিটারে ৫৩ টাকার বেশি বেড়েছে। অর্থাৎ, জানুয়ারির দামের তুলনায় এখনকার দাম দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি! 


ডিজেলকে টপকে কেরোসিনের দাম এখন প্রায় পেট্রলের সমান সমান। রান্নার গ্যাসের অগ্নিমূল্যের সঙ্গে যুঝে উঠতে না পেরে, যাঁরা আবার কেরোসিন আর স্টোভে ফিরেছিলেন, তাঁরা এখন উভয় সঙ্কটে। 

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারিতে কলকাতায় এক লিটার কেরোসিনের জন্য গ্রাহকদের গুনতে হত ৪৮ টাকা ৫৫ পয়সা। সাত মাসে তা বাড়তে বাড়তে, এখন শহরে লিটার প্রতি কেরোসিনের দাম প্রায় ১০২ টাকা। এই পরিস্থিতিতে গরিব, নিম্নবিত্ত ও সাধারণ মানুষরাও যে আর কেরোসিন কিনে উঠতে পারছেন না, ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের কর্তৃপক্ষের কথায় তা স্পষ্ট। 


ওয়েস্ট বেঙ্গল কেরোসিন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক গুপ্তের কথায়, আমরা আর এখন আগের মতো কেরোসিন তেল তুলি না। কারণ লোকে কিনতে পারছে না। আগে ১৫ ব্যারেল লাগত। এখন ৩-৪ ব্যারেল লাগছে। এই দামের জন্য আমাদের ডিলাররা রোজগার হারাচ্ছে।


কেরোসিন গ্রামবাংলার  গরিব পরিবারগুলির কাছে অন্যতম বড় ভরসা। দামের নিরিখে এবার কি তা পেট্রলকেও ছাপিয়ে যাবে?  কেরোসিন দুর্মূল্য হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কি কয়লা আর ঘুটের উনুনে ফিরতে হবে? 


অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলছেন, কেরোসিন সব চেয়ে গরিবরা ব্যবহার করেন। এই দামে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গরিবরাই। তাঁরা গ্যাসও কিনতে পারছেন না।  এখন মানুষ বাধ্য হবে কাঠ দিয়ে রান্না করতে। পেট্রলের দামের ওপর কোম্পানির মুনাফা থাকে। রাজ্য ও কেন্দ্রের কর থাকে। কোম্পানির সেখানে পিডিএস-এর কেরোসিন, যাতে ট্যাক্স নেই, তার দাম কীভাবে এমন হয়, তা হিসেবে আসছে না। সব মিলিয়ে জ্বালানির জ্বালায় জেরবার সাধারণ মানুষ। সুরাহার কোনও লক্ষণ নেই।