কলকাতা : লেক থানা এলাকায় গান পয়েন্টে IAS অফিসারের স্ত্রীকে 'ধর্ষণ'-র ঘটনার তদন্তে এবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মহিলা ডিসি-কে দেওয়া হল তদন্তভার। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে লালবাজার । নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে গতকাল হাইকোর্টে ভর্ৎসিত হয় কলকাতা পুলিশ।


ঘটনা কী ?


আরজি কর মেডিক্য়ালে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায়, ইতিমধ্য়েই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ। সরানো হয়েছে দুজন আইপিএস অফিসারককে। গ্রেফতার হয়েছেন একজন ওসি। কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট, একাধিকবার ভর্ৎসিত হতে হয়েছে কলকাতা পুলিশকে। এই আবহে অন্য় একটি মামলায় গুরুতর প্রশ্নের মুখে পুলিশি তদন্ত। এক IAS অফিসারের স্ত্রীকে ধর্ষণের মামলায় গতকাল হাইকোর্টে অস্বস্তির মুখে পড়ে কলকাতা পুলিশ। 


তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে লেক থানার OC-সহ ৬ পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ।


ওই IAS অফিসারের স্ত্রীর দাবি, ১৪ জুলাই রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ এবং ১৫ জুলাই ভোর সাড়ে ৬টা নাগাদ বাড়িতে ঢুকে, মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। বিকেল সোয়া ৪টেয় নির্যাতিতা লেক থানায় পৌঁছন তিনি। কিন্তু, অভিযোগ না নিয়ে তাঁকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয় বলে দাবি IAS অফিসারের স্ত্রীর। এরপর পাশাপাশি লঘু ধারায় মামলা দায়ের এবং অভিযোগপত্র বিকৃত করার অভিযোগও তুলেছেন নির্যাতিতা। তাঁর বক্তব্য়, অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়ার পরই নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান। পরবর্তী ক্ষেত্রে অভিযুক্তের আগাম জামিনও মঞ্জুর হয়।


এরপর ওই IAS অফিসারের স্ত্রী কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে অভিযুক্তর নিম্ন আদালত থেকে পাওয়া জামিন ও আগাম জামিন খারিজ করেন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে, বিচারপতি ভরদ্বাজ বলেন, যৌন নির্যাতনের মত গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, প্রাথমিকভাবে লঘু ধারায় FIR হওয়ার ফলে, মামলা দুর্বল হয়েছে। শুধু তাই নয়। বিচারপতি ভরদ্বাজ আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে সঠিক ধারায় FIR দায়ের না হওয়া এবং অভিযোগপত্র বিকৃত করার যে অভিযোগ উঠছে তার ফলে এই তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।


শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে লেক থানার OC, এক সাব ইন্সপেক্টর , একজন সার্জেন্ট এবং ৩ মহিলা পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বিচারপতি ভরদ্বাজ নির্দেশ দেন, লালবাজারে কর্মরত ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার এক মহিলা আধিকারিককে মামলা হস্তান্তর করার। তিনি এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক হবেন।
  
নির্যাতিতার দাবি, ঘটনা ঘটেছিল ১৪ এবং ১৫ জুলাই। আর ৯ অগাস্ট তাঁকে জানানো হয়, তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষা হবে ২০ আগস্ট। অর্থাৎ ঘটনার ৩৫ দিন পর!সেই দিনই তাঁকে আরও জানানো হয়, মামলার তদন্তভার কড়েয়া থানার এক মহিলা পুলিশকর্মীকে দেওয়া হয়েছে। যদিও, রাজ্য় সরকারের তরফে দাবি, ১৫ জুলাই লেক থানায় মহিলা তদন্তকারী আধিকারিক উপস্থিত না থাকায় কড়েয়া থানা থেকে একজন মহিলা আধিকারিককে ডেকে পাঠানো হয়। ১৬ জুলাই তিনি লেক থানায় আসেন এবং নির্যাতিতার বয়ানের ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়। তখন নির্যাতিতা মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেননি। 


যদিও নির্যাতিতার দাবি, FIR দায়েরের পরই অভিযুক্তের স্ত্রী এবং ছেলেকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয় তারা। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর নির্যাতিতার পোশাক এবং অন্য জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করতে বাড়িতে যায় পুলিশ। কিন্তু, অভিযুক্তর বাড়িতে ঢোকার ও বেরনোর CCTV ফুটেজ নিতে পুলিশ অস্বীকার করে বলে অভিযোগ।


পুলিশের বিরুদ্ধে আরও চাঞ্চল্য়কর অভিযোগ তুলেছেন ওই IAS অফিসারের স্ত্রী। তাঁর দাবি, মেডিক্যাল পরীক্ষা করার প্রয়োজনও বোধ করেননি তদন্তকারী আধিকারিক। তিনি নিজেই সরকারি হাসপাতালে যান এবং মেডিক্যাল রিপোর্ট তদন্তকারী আধিকারিককে দেন। যদিও, রাজ্য় সরকারের দাবি, নির্যাতিতা সরকারি হাসপাতালে যে মেডিক্য়াল পরীক্ষা করান এবং যে রিপোর্ট পুলিশকে দেন, তাতে ধর্ষণের অভিযোগের প্রমাণ প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রশাসন এইসব সাফাই দিলেও, হাইকোর্ট যে তাদের ভূমিকায় চরম অসন্তুষ্ট, তা বিচারপতির মন্তব্য় থেকেই স্পষ্ট।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।