অর্ণব মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা: ডেঙ্গির (Dengue) দাপট ঠেকাতে, এ বছর আগে থেকেই তৎপর কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipality)। ল্য়াবরেটরিতে কলকাতা পুরসভার (KMC) কর্মীদের দেওয়া হচ্ছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। কোন মশা মারতে কী রাসায়নিক স্প্রে করতে হয়, কত দূর থেকে স্প্রে করতে হয়, তা-ও শেখানো হচ্ছে হাতেকলমে।
গত বছর করোনার প্রভাব একটু কমতেই, ফের ভয়াবহ চেহারা নিয়েছিল ডেঙ্গি! প্রাণ গেছিল অনেক ডেঙ্গি আক্রান্তের। কথা মাথায় রেখে, এবার আগেভাগেই মাঠে নামল কলকাতা পুরসভা। এখন থেকেই শুরু হয়ে গেল, মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে যুক্ত কর্মীদের প্রশিক্ষণ।
ডেঙ্গির মশা সব রাসায়নিকে মরে না। তাই ডেঙ্গি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ মশা চেনা। তাই জুলজিক্য়াল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্য়োগে, কলকাতা পুরসভার ল্য়াবরেটরিতে আনা হয়েছে ডিজিটাল মাইক্রোস্কোপ। এই মাইক্রোস্কোপের মাধ্য়মে কোন মশার কী বৈশিষ্ট্য়, তা বোঝানো হচ্ছে কলকাতা পুরসভার কর্মীদের।
ডেঙ্গির (Dengue) মশার লার্ভা কিংবা পূর্ণাঙ্গ মশা মারতে কীরকম স্প্রে করতে হয়, কত দূর থেকে স্প্রে করতে হয়, তা-ও হাতেকলমে দেখানো হচ্ছে পুর-কর্মীদের। মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধের সঙ্গে যুক্ত পুর-কর্মীদের করোনাকালে অন্য় কাজে লাগানো হয়েছিল। তারপর ফের পুরনো কাজে ফিরলেও, প্রথম দিকে কিছু সমস্য়া হয়েছিল। এবার যাতে আর তা না হয়, তাই এই প্রশিক্ষণের ব্য়বস্থা। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ এপ্রিল অবধি ওয়ার্ড ধরে ধরে পুর-কর্মীদের এই প্রশিক্ষণ চলবে।
বেড সঙ্কটের ছবি: অন্যদিকে করোনা, ডেঙ্গির পর এবার অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপ। এবার অ্য়াডিনো-আতঙ্কের মধ্যেই বেড সঙ্কটের ছবি। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বেডের জন্য় হাহাকার। প্রায় সবখানেই ভর্তি পেডিয়াট্রিক ICU। উদ্বেগের মধ্যেই সরকারি হাসপাতালগুলিতে গেলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা। স্বাস্থ্য ভবনে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করলেন দফতরের আধিকারিকরা। একই বেডে ৩ শিশু, সঙ্গে তাদের মায়েরা। এই অবস্থাতেই চলছে স্য়ালাইন, অক্সিজেন। গাদাগাদি করে বেডে শুয়ে শিশুরা, পাশে স্য়ালাইনের বোতল ধরে আছেন তার মা।
পেডিয়াট্রিক ICU-র অবস্থাও মারাত্মক। সেখানেও এক বেডে ২ জন করে শিশু। মার্ক করতে হবে। PICU-র ছবি কোনটা আলাদা করে বুঝতে না পারলে তানিয়াকে জিজ্ঞেস কোরো।
অ্য়াডিনো-আতঙ্কের মধ্যেই ভয়াবহ ছবি ফুলবাগানের বিসি রায় শিশু হাসপাতালে। এখানে পেডিয়াট্রিক ICU, এমার্জেন্সি ওয়ার্ড , পেডিয়াট্রিক বিভাগ ৩টেই ভর্তি। একটি বেডে কোথাও রাখা হচ্ছে ২ শিশুকে। কোথাও ৩ জনকে। সঙ্গে থাকছে তাদের মায়েরা।
চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। শুধু বিসি রায় শিশু হাসপাতালই নয়, কলকাতার প্রায় সব সরকারি হাসপাতালে এমনই বেডের আকাল। ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ, চিত্তরঞ্জন শিশু সদন, মেডিক্য়াল কলেজ, বি সি রায় শিশু হাসপাতালে, সমস্ত পেডিয়াট্রিক ICU বা PICU বেড ভর্তি। NRS হাসপাতালে মোট ৩৮টার মধ্য়ে ৩০টি ভর্তি।
এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য় দফতর। সোমবার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন স্বাস্থ্য় শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। বি সি রায় শিশু হাসপাতালের ফুলবাগান ও বেলেঘাটা দুই ক্যাম্পাস ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যান তিনি। রোগীর চাপ সামলাতে কোভিড কালের মতো জরুরি কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা। এদিকে, বিসি রায় শিশু হাসপাতালের ফুলবাগান ক্য়াম্পাসে রোগীর চাপ কিছুটা কমাতে, বেলেঘাটা ক্য়াম্পাসকে যথাযথভাবে ব্য়বহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য় দফতর।