কলকাতা: ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর (East West Metro) কাজের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির কী ভবিষ্যৎ? বউবাজারের ২৩টি বাড়ির নকশা অনুমোদন করতে শুক্রবার বিশেষ বৈঠকে বসবেন মেয়র পারিষদরা। বাড়ির নকশা অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করবে KMRCL।
২০১৯ সালে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ করতে গিয়ে বিপর্যয় নামে বউবাজারে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো টানেলে জল ঢুকে যাওয়ায় একের পর এক বাড়িতে ফাটল ধরতে শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন বাসিন্দারা। দীর্ঘ পাঁচ বছর কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত নিজের ঠিকানায় ফিরতে পারেননি প্রায় কেউই। ২০২২ সালেও একই রকম বিপর্যয় ঘটে। এমনকী এই মাসেও মেট্রোর টানেলে জল ঢোকার সমস্যার জন্য বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন বেশ কয়েকজন।
ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির কী ভবিষ্যৎ?
বুধবার পুরসভার মাসিক অধিবেশনে বউবাজার মেট্রো বিপর্যয়ের পর KMRCL-এর কাজ এবং তার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। তিনি বলেন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে KMRCL ভেঙে পড়া বাড়িগুলোর যে পুনর্নির্মাণ করবে তার আগে প্রয়োজন নকশা মঞ্জুরের। এই বিষয়ে কলকাতা পুরসভার তৎপরতা দাবি করেন তিনি। যে বাড়িগুলো কম ক্ষতিগ্রস্ত এবং মেরামত করে বাসযোগ্য তার ফিট সার্টিফিকেট পুরসভা দিতে পারে কিনা সেই প্রশ্নও করেন তৃণমূল কাউন্সিলর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির রিপোর্ট জমা পড়েছে কিনা জানতে চান তিনি। মেট্রোর কাজ শেষ হওয়ার পরে KMRCL ১০ বছরের জন্য বিপর্যস্ত এলাকার বাড়িগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিক বলেও প্রস্তাব রাখেন। পুরসভাকে এই বিষয়ে উদ্যোগও নিতে বলেন তিনি।
সেই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বৌবাজারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি নিয়ে পুরসভার অবস্থান স্পষ্ট করেন মেয়র। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট জমা পড়েছে বলে উত্তরে জানান মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পুরসভা ২৩ টি বাড়ির নকশা মঞ্জুরের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে বলেও জানান তিনি। ফিরহাদ বলেন, বউবাজারের ২৩টি বাড়ির নকশা নিয়ে বৈঠকে বসছে কলকাতা পুরসভা। নকশার অনুমোদন দেওয়া নিয়ে ২৭ তারিখ মেয়র পারিষদদের বৈঠক। বাড়ির নকশা অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করবে KMRCL। কম ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি মেরামত করে বাসযোগ্য কিনা সেই বিষয়ে ফিট সার্টিফিকেট দেওয়ার অধিকার পুরসভার নেই বলে জানান মেয়র। যেহেতু বাড়িগুলো নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামতির কোন কাজই পুরসভা করেনি তাই তারা ফিট সার্টিফিকেট দিতে পারেনা বলে জানান মেয়র। পুরসভা KMRCL-কে ১০ বছরের জন্য বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ দিতে পারে না আবেদন করতে পারে বলে জানান মেয়র। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে বলেন, "দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় ওই এলাকার বাসিন্দারা নিজের ভিটেবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র রয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ জন যারা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সদস্য তারা প্রয়াত হয়েছেন তারা নিজের ভিটেবাড়িতে ফিরতে পারলেন না।''
২০১৯ সালে দুর্গাপুজোর আগে বউবাজারে এই এলাকার বাসিন্দাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। আচমকা ঘরছাড়া হয়েছিলেন সকলে। ফের দুর্গাপুজো আসছে। ঘরে ফেরার অপেক্ষায় দিনগুনছেন এই মানুষগুলোও। এই বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকার এবং কলকাতা পুরসভাকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিরোধী কাউন্সিলররা। বিজেপি কাউন্সিলর মিনাদেবী পুরোহিত বলেন,"কেন্দ্র শুধুমাত্র টাকা দিতে পারে। কিন্তু কাজ করতে হবে কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্য সরকারকে। তারা সেই কাজ করছে না শুধু মুখে বড় বড় কথা বলছে। মেট্রোকে ও আরও বেশি সজাগ এবং উদ্যোগী হতে হবে। শুধু মুখে কথা বললে হবে না।''
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: Nabanna Meeting: স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের ডাক, কী আলোচনা হতে পারে নবান্নে?