সন্দীপ সরকার ও অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কলকাতা : রাজ্যে ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্তের সংখ্যা ৫১ হাজার পার ! ভয়ঙ্কর এই ডেঙ্গি পরিস্থিতির মধ্যেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্লেটলেটের আকাল (Platelet Crisis)। কলকাতার একাধিক ব্লাড ব্যাঙ্কে (Blood Bank) প্লেটলেটের ভাঁড়ার শূন্য। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীর পরিজনরাও।


গোদের উপর বিষফোঁড়া !


এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া ! আক্রান্ত ৫১ হাজার পার ! ইতিমধ্যেই রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের। আর এর সঙ্গেই, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্লেটলেটের আকাল। শহরের একাধিক ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লেটলেটের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সূত্রের খবর, কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ, এমআর বাঙুর হাসপাতালে প্লেটলেটের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য । কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ২০ ইউনিট, SSKM-এ ৪০ ইউনিট এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৩০ ইউনিট প্লেটলেট মজুত রয়েছে। আর এতে যে শুধু ডেঙ্গি আক্রান্তরাই সমস্যায় পড়ছেন তা-ই নয়, দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীর পরিজনরাও। 


রবিবার বেলা ১২টা। পরিস্থিতি যে কতটা উদ্বেজনক তা দেখা গেল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। ধরা পড়ল রোগীর পরিবারের উদ্বেগের ছবি। শুধুমাত্র শহরের সরকারি হাসপাতালগুলিতেই যে প্লেটলেটের সঙ্কট তা-ই নয়, একই ছবি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে, রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত একাধিক জায়গায় দেখা যায় ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লেটলেটের ভাঁড়ার শূন্য। একটির ব্লাড ব্যাঙ্কে রয়েছে ৭০ ইউনিট প্লেটলেট। কোথাও ৪, ২০, কোথাও আবার ১৮ ইউনিট প্লেটলেট মজুত। 


মা ক্যানসারে আক্রান্ত। কয়েক দিন হন্যে হয়ে ঘোরার পর মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লেটলেটের সন্ধানে আসেন এই ব্যক্তি। তিনি জানান, মা ক্যানসারে আক্রান্ত, রক্ত নেই। ৮ ইউনিট রক্ত দরকার। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে কাগজ জমা দিয়েছে।


কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে দেখা গেল, অনেক ছোটাছুটি করে কয়েক ইউনিট প্লেটলেটের সংস্থান করতে পেরেছেন এক রোগীর আত্মীয়। তিনি বলেন, তিন দিন আগে ৬ ইউনিট দরকার ছিল। মায়ের রক্তের অসুখ। ২ ইউনিট পাওয়া গেছে। এজন্য ছোটাছুটি করতে হয়েছে। 


রাজ্যে ডেঙ্গিতে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি এখন উত্তর ২৪ পরগনায়। সেখানকার হাসপাতালগুলিতেও প্লেটলেট সঙ্কটের একই ছবি ধরা পড়েছে। 


ব্যারাকপুর মহকুমা হাসপাতালে কোনও প্লেটলেটের ইউনিট নেই। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ৭ ইউনিট প্লেটলেট মজুত আছে। এদিকে, ডায়মন্ডহারবার মেডিক্যাল কলেজ, বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে প্লেটলেটের ভাঁড়ার শূন্য। 


ডেঙ্গিতে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গেও। সেখানকার, জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে ৬, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ৪৩ ইউনিট, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ২৮ , মালদা মেডিক্যাল কলেজ ৪১ ও বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ ৭০ ইউনিট প্লেটলেট মজুত আছে। 


ডেঙ্গি আক্রান্ত হলে প্রতিমুহূর্তে প্লেটলেটের ওঠানামা নিয়ে দুঃচিন্তা থাকেই। সবমিলিয়ে, প্লেটলেটের সঙ্কট যেন ডেঙ্গির উদ্বেগকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।


আরও পড়ুন ; রাজ্যে ভয়ঙ্কর চেহারা নিচ্ছে ডেঙ্গি, মধ্যমগ্রামের বাদুতে ডেঙ্গি আক্রান্ত গৃহবধূর মৃত্যু