সন্দীপ সরকার, কলকাতা : ক্রমশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গি (Dengue)। এবার ডেঙ্গি আক্রান্ত প্রসূতির মৃত্যু। বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে (Private Hospital) মৃত্যু বাঘাযতীনের তরুণীর। মৃতের নাম পায়েল নন্দী। বয়স ৩৩ বছর।
গত ২৬ অগাস্ট পুত্রসন্তান প্রসব করেন তিনি। সন্তান জন্মের তিনদিনের মাথায় তাঁর ডেঙ্গি ধরা পড়ে। প্রথমে তাঁকে বেলেঘাটা আইডি ও পরে পিয়ারলেস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন মৃত্যু হয়েছে প্রসূতির।
কলকাতা পুরসভার ১০২ নম্বর ওয়ার্ড বাঘাযতীনের চিত্তরঞ্জন কলোনির বাড়িতে থাকতেন পায়েল নন্দী। প্রসব যন্ত্রণা উঠলে তাঁকে টালিগঞ্জের মাতৃসদনে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে ২৬ অগাস্ট তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার তিন দিনের মাথায় তাঁর ধুম জ্বর আসে। ২৯ অগাস্ট রক্ত পরীক্ষা রিপোর্টে ডেঙ্গি পজিটিভ আসে। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, হাসপাতালের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় তাদের ওখানে প্রসূতি ডেঙ্গি আক্রান্তের চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। তাঁকে অন্যত্র স্থানান্তরের কথা বলা হয়। একদিকে অসুস্থ অবস্থায় সদ্যোজাতের চিকিৎসা চলাকালীন, পায়েল নন্দীকে অন্যত্র চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এরপর মৃত্যু।
রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গি দাপটের খবরের মধ্যেই, বহু প্রতীক্ষিত ডেঙ্গি ভ্যাকসিন (Dengue Vaccines) অবশেষে আসতে চলেছে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, নভেম্বর মাসেই দেশ জুড়ে শুরু হচ্ছে চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (Clinical Trial)। আইসিএমআর এবং প্যানাসিয়া বায়ো টেক লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে হবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল । সারা দেশের ২০টি কেন্দ্রে এই ট্রায়াল হওয়ার কথা। পশ্চিমবঙ্গে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে বেলেঘাটা নাইসেডে। ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হবে ডেঙ্গির টিকা।
আইসিএমআর-এর সৌজন্যে রাজ্যের একমাত্র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ল কেন্দ্র হিসাবে থাকছে বেলেঘাটার নাইসেড। এই কথা জানিয়েছেন নাইসেডের অধিকর্তা। প্যানাসিয়া বায়ো টেক লিমিটেড ডেঙ্গি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ আগেই শুরু করেছিল। প্রথম এবং দ্বিতীয় দফার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আগেই শেষ হয়ে যায়। চলতি বছরে মার্চ-এপ্রিলে তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেই ট্রায়াল শেষ হলে বহু প্রতীক্ষিতি ডেঙ্গি ভ্যাকসিন হাতে পেত দেশবাসী। কিন্তু ভ্যাকসিনে কিছু জটিলতার কারণে সেই তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটি পিছিয়ে যায়। ভ্যাকসিনে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। সেই পরিবর্তন শেষ হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে ডেঙ্গি ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হবে। এক বছর ধরে তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। শরীরে কী পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য তা পরীক্ষা করে চূড়ান্ত পর্যায়ের ছাড়পত্র পেলে তবেই এই ভ্যাকসিন সাধারণ মানুষের জন্য বাজারে নিয়ে আসা হবে। এখন দেখার কতটা সাফল্য পায় এই তৃতীয় তথা চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল।