বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: ইডি’র (ED) লাগাতার অভিযানের সৌজন্যে,এখন সবার মুখে মুখে একটাই নাম তাপস মণ্ডল (Tapas Mandal) । একাধিক কলেজের মালিক! কিন্তু কেই তাপস মণ্ডল? কীভাবে তাঁর এই চমকপ্রদ উত্থান? কীভাবে এত প্রভাবশালী হয়ে উঠলেন তাপস? বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতে মানিক ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলের বাড়ি থাকলেও, আদতে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শুরু থেকেই নানারকম বেআইনি কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মানিক ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল। যার শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে, ১৯৮৫ সাল থেকে। ক্ষমতায় তখন সিপিএম,পাঁশকুড়া স্টেশন বাজার লাগোয়া এলাকায় একটি চিটফান্ড খুলেছিলেন তাপস মণ্ডল। সেই চিটফান্ড কোম্পানির নাম ছিল মিনার্ভা ফাইনান্স লিমিটেড। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বর্তমানে পাঁশকুড়ার পাতন্দা গ্রামে তাপস মণ্ডলের যে কলেজ রয়েছে, তার নামের সঙ্গেও রয়েছে সেই মিনার্ভা, মিনার্ভা অ্যাকাডেমি বি এড কলেজ।
পাঁশকুড়া স্টেশনের পাশে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে চিটফান্ড কোম্পানি শুরু করেন। কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টে নথিবদ্ধ করা হয়। তাপস মণ্ডলের সেই চিটফান্ডে মোট ৭ জন ডিরেক্টর ছিলেন। নথিতে দেখা যাচ্ছে, ডিরেক্টর হিসেবে এক নম্বরে নাম ছিল তাপস মণ্ডলের। স্থানীয় সূত্রে দাবি, বাজারের চেয়ে বেশি সুদের লোভ দেখিয়ে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছিল এই চিটফান্ড কোম্পানি। জাল ছড়িয়ে পড়েছিল তত্কালীন অবিভক্ত মেদিনীপুর,হাওড়া ,হুগলি, এমনকি পড়শি রাজ্যের ভুবনেশ্বরেও। তাপস মণ্ডলের তৈরি সেই চিটফান্ড কোম্পানির অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন এই ব্যক্তি।
এই চিটফান্ড সংক্রান্ত একটি মামলাতে ১৯৯০ সালে ওড়িশা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তাপস মণ্ডল। কয়েকমাস জেলও খাটেন। পাঁশকুড়া পাতন্দা গ্রামের বাসিন্দা অতুল মান্না বলেন, ও এক নম্বরের চিটিংবাজ। এলাকয় প্রচুর লোকের কাছ থেকে টাকা তুলেছে।প্রচুর সম্পত্তি এখানে। সব তাপসের টাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তারপরই চিটফান্ডের ব্যবসা গুটিয়ে নেন মানিক ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল। এখন সেই তাঁর বিরুদ্ধেই নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার ভয়ঙ্কর অভিযোগ।
আরও পড়ুন, মোদি ‘ভাল’, শাহ ‘খারাপ’, এমন স্ট্র্যাটেজিতেই এগোচ্ছেন মমতা ?
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যর আমলেই নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে নেমেছে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা। যদিও এরপরও মুখে কুলুপ ইডি হেফাজতে থাকা তৃণমূল বিধায়কের।ইডি আদালতে জানিয়েছিল, তদন্তে সহযোগিতা করছেন না মানিক। তাঁকে যে প্রশ্ন করা হচ্ছে সেগুলিরও সদর্থক উত্তর পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন তদন্তকারীরা। তবে সেই মানিকের নাম জড়াতেই উঠে আসে তাপস মন্ডলের নাম বাংলার নিয়োগ দুর্নীতিতে।