দীপক ঘোষ, কলকাতাঃ সকাল থেকে টানটান ছিল উত্তেজনার পারদ ( Presidential Election)। গেরুয়া শিবিরের (BJP)  তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিজেপি বিধায়কদের মুখে একটাই কথা, ৭৫ এর ৭ গেছে, ৭০ অন্তত জড়ো করতে হবে দ্রৌপদীর (Draupadi Murmu) ঝুলিতে। ৭০? এই প্রশ্ন ধেয়ে এসেছে বিরোধী শিবিরে বারবার। তারপর সকালেই সেই চমকটা এলো। অর্জুন সিংয়ের ছেলে পবন সিং এসে হাজির বিজেপির জন্য বরাদ্ধ ঘরে। বাবা চলে গেছে তৃণমূলে, ছেলে বসে গেরুয়া ঘরে? পবনকে দেখিয়ে আর চোখে বিজেপি নেতারা ইঙ্গিত করলেন,' কেমন দিলাম।'


আরও পড়ুন, তৃণমূলে ছিলাম, আছি, থাকব: শিশির অধিকারী


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিধায়কের দাবি, গতকালই পবন জানিয়েছিল এনডিএ প্রার্থীকেই ভোট দেবে সে। লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন সব বিজেপি বিধায়ক। তৃনমূল সেই অর্থে সংগঠিতভাবে ভোট দেবার পরিকল্পনা করেনি। যদিও শাসক দলের কিছু উৎসাহী বিধায়ক চলে এসেছিলেন সাত সকালেই। লম্বা লাইনের ফাঁক ফোকরে নজরে এলো কয়েকজন তৃনমূল বিধায়ককেও। মোটামুটি সাড়ে এগারোটার মধ্যে গেরুয়া শিবিরের ভোট পর্ব সাঙ্গ হতেই ফের বাসে চেপে তারা রওনা হলেন, এবার গন্তব্য নিজাম প্যালেস। কব্জি ডুবিয়ে খাবার ব্যবস্থা হয়েছে সেখানে। ভাত-মুগডাল-আলুভাজা-ছ্যাচড়া-পনির-ভেটকির পাতুরি-সর্ষে ইলিশ-মুরগির মাংস-আমের চাটনি-রসগোল্লা-মিষ্টি পান। ভুঁড়ি ভোজনে যখন ব্যস্ত বিজেপি বিধায়করা তখন তৃণমূলের বিধায়করা সব পৌঁছে গেছেন বিধানসভায়। লম্বা লাইন। কোনও প্রতিপক্ষের দেখা নেই করিডরে। তিনজন বিজেপির পোলিং এজেন্ট শুধু পালা করে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সময় রঙচঙে বেশে হাজির মদন মিত্র।


করিডরে পা দিতেই একটা হালকা চাঞ্চল্য। কেউ সানগ্লাস আবার কেউ তার জুতো নিয়ে হরেক মন্তব্য করছেন। সামান্য একটু মুখে গোজার জন্য তখন নিজের ঘরে এসেছিলেন মনোজ টিজ্ঞা। বললেন, " আমার নিজামে যেতে দেরি হবে বলে হালকা কিছু খেয়ে গেলাম। খাওয়া শেষে ছুটছেন ভোট কাউন্টারে, এমন সময় তার চোখে পড়ল মদন মিত্রকে। একগাল হাসি দিয়ে টিজ্ঞা ছুটে এলেন মদনের কাছে। তারপর দুজনের হাসি-মস্করার ঢেউ উঠলো যেন। সেই সময় ভোটের লাইনে দাঁড়াতে চলে এসেছেন প্রাক্তণ পুলিশ কর্তা এবং তৃনমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির।


  গম্ভীর গলায় বললেন, 'কী হচ্ছে টিজ্ঞাদা? হুইস্প্যারিং ক্যাম্পেনিং? এখানে কিন্তু ১৪৪ ধারা, এরেস্ট করে নেব। হাসিতে ফেটে পড়ে টিগ্গার উত্তর," আমি চিফ হুইপ সুতরাং ওই কাজটা আমার। ততক্ষনে আরও বিধায়ক চলে এসেছেন মজা নিতে। ভিড় বাড়তেই টিজ্ঞা ছুটলেন বিধানসভা কক্ষের দিকে। যেতে যেতে বললেন, আমি গিয়ে স্বপনকে ছেড়ে দি( স্বপন মজুমদার, বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক এবং দলের পোলিং এজেন্ট)। টিজ্ঞা গেলে স্বপন যাবেন নিজামে। মদন মিত্র আড্ডার মুডেই ভিড়ে গেলেন ভিড়ের মধ্যে। ভোটের লাইনে দাঁড়ানোর কোনও হুড়োহুড়ি নেই তার মধ্যে। স্রেফ নির্ভেজাল আড্ডা। করিডরে শুধুই তখন তৃনমূল বিধায়কদের লম্বা লাইন।