অবির দত্ত, ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা : রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র নিউটাউন। ঝাঁ চকচকে অফিস পাড়ায় রোজ অন্তত ৫৫ হাজার আইটি কর্মী কাজের সূত্রে যাতায়াত করেন। সেখানেই টোটোয় করে বাড়ি ফিরতে গিয়ে ভয়ঙ্কর পরিণতি হয়েছে ১৪ বছরের কিশোরীর। টোটো চালকের স্ত্রীর বয়ানে উঠে এসেছে হাড়হিম করা ঘটনার বর্ণনা, যা স্বাভাবিকভাবেই ঘুম ওড়াবে মানুষের। কারণ যে নিউটাউনে ভয়াবহ পরিণতি হয় স্কুল ছাত্রীর, সেখানেই তো রাত-বিরেতে, নিঝুম সন্ধেয়, আলো-আঁধারি রস্তায় পথ চলা স্থানীয় বাসিন্দা থেকে নিত্য যাত্রীদের।
সেক্টর ফাইভ, নিউ টাউন। একের পর এক অফিস। আইটি কর্মী থেকে মিডিয়া কর্মচারী, অনেককেই রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। রাত বিরেতে বাস মেলে না। তখন বাড়ি-ফেরার ভরসা অটো-টোটোই। সেই টোটো-চালকের বিরুদ্ধেই খুন-ধর্ষণের মতো অভিযোগ উঠেছে, যা ঘিরে আতঙ্ক বাড়ছে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের মধ্যে। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটারের মধ্যে নিউটাউন থানা। এখানেই রাজ্যের অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র, সেক্টর ফাইভের অফিস পাড়া। শুধু তথ্য প্রযুক্তি কর্মীরা নন,সেক্টর ফাইভ এখন এ শহরের অফিস পাড়া। কিন্তু সন্ধে পেরোলেই অধিকাংশ রাস্তা হয়ে যায় শুনশান। এহেন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা। পরিসংখ্যান বলছে নিউটাউন, সেক্টর ফাইভ মিলিয়ে অন্তত ৫৫ হাজার আইটি কর্মী রোজ কাজের সূত্রে এখানে যাতায়াত করেন। কিন্তু প্রদীপের নীচে থাকা অন্ধকারের মতো, সেই নিউটাউনের নিরাপত্তাতেই একটা বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন বসিয়ে দিয়েছে এই ঘটনা।তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সপ্তরা চক্রবর্তী এবিপি আনন্দের কাছে তাঁর উদ্বেগপ্রকাশ করলেন। টেনে আনলেন আর জি কর প্রসঙ্গ। প্রশ্ন তুললেন, ট্রাফিক পুলিশ ক'টা জায়গায় থাকে, পুলিশের পেট্রোলিং তো নেইই। কাজের জায়গায় আসা-যাওয়ার পথে নিরাপত্তা কোথায় ? নিউটাউনের আরেক বাসিন্দার গলাতেও আতঙ্কের সুর। তিনি জানালেন, আগে রাত ১১ টা অবধি দোকান চালালেও, ইদানিং ৮ টার মধ্যেই শাটার নামিয়ে দেন। রাস্তাতেই চলে মদ্যপান, নজরদারি নেই, অভিযোগ তাঁর। বহু দিনই বেশ রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মীদের। রাত বিরেতে বাস না পেলে অটো, টোটোই তো ভরসা! আর সেই টোটোচালকের বিরুদ্ধেই কি না খুন-ধর্ষণের অভিযোগ ! ঝাঁ চকচকে, ঝলমলে নিউটাউন। আইটি হাব। সেখানেই এই ভয়ঙ্কর ঘটনা উদ্বিগ্ন করছে স্থানীয় হাইপ্রোফাইল বাসিন্দাদেরও। অবসরপ্রাপ্ত অরূপ রাহা বললেন, এসব কারণে দিল্লি ছেড়ে এসেছিলেন, এখানেও এমন ঘটবে কী ভাবে ভাবব। প্রাক্তন DIG, BSF নিউটাউনের বাসিন্দা সমীর মিত্র জোর দিলেন পুলিশের নাইট পেট্রোলিংয়ের উপর। তাঁর পরামর্শ নাইট পেট্রোলিং, সারপ্রাইজ চেকিং বাড়লেই পুলিশের উপর ভরসা ফিরবে।
গোটা নিউটাউন কার্যত CC ক্যামেরায় মোড়া। কিন্তু যেখান থেকে নাবালিকার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল, রাতে সেই জায়গাটি কার্যত জনশূন্য থাকে। পোস্ট থাকলেও, তাতে আলো জ্বলে না। নেই সিসি ক্যামেরাও। নিউটাউন জুড়ে একের পর এ অভিজাত বহুতল! হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। সেখানেও নিরাপদ বোধ করছেন না মেয়েরা। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে ঠিকই কিন্তু এই খারাপ ঘটনাগুলো আটক ? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।