কলকাতা: মাত্র ৪০ মিনিটের হামলা। আর তাতেই কার্যত ধ্বংসস্তূপ আর জি কর হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগ এবং আশপাশের আরও কিছু পরিকাঠামো। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে এই হাসপাতালে এখন কোনও রোগীকে আপৎকালীন পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আর নেই। যা পরিস্থিতি হয়ে রয়েছে তাতে এই ভাঙাচোরা অবস্থায় এমারজেন্সি পরিষেবা কোনওভাবেই দেওয়া যাবে না বলে জানাচ্ছেন হাসপাতালে চিকিৎসক-স্বাস্থ্য়কর্মীরা।
এমারজেন্সি রুমে যে বেডগুলি রয়েছে। সেগুলি আর ব্যবহারের যোগ্য নেই। ভেঙে তছনছ করা হয়েছে সবকটা। বেডের রেলিং ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ওই এমারজেন্সি রুমে শয্যাগুলির সঙ্গে একাধিক মনিটর, আরও নানা প্রয়োজনীয় যন্ত্র ছিল। যা সব ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ওই যন্ত্রগুলির দাম লক্ষাধিক। সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এর পাশেই রয়েছে নার্সিং রুম। সেখানে আপৎকালীন পরিষেবা দেওয়ার জন্য যাবতীয় ওষুধ, জিনিসপত্র এবং আরও নানা সামগ্রী ছিল। সব তছনছ করা হয়েছে। ওই রুমে ১৫ দিন থেকে ১ মাসের জন্য এমারজেন্সি পরিষেবা দিতে যা লাগে সেই মতো ওষুধ ও অন্যান্য জিনিসপত্র রাখা থাকে। সবই নষ্ট করা হয়েছে। স্যালাইনের অজস্র বোতল মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে রয়েছে। ওই ঘরে ট্রে-তে করে আলাদা আলাদা করে নানা ওষুধ রাখা ছিল। সব ভাঙচুর করা হয়েছে। ওই ঘরে একটি ফ্রিজের মধ্যে একাধিক দামী ও প্রয়োজনীয় ওষুধ রাখা ছিল, ওই ফ্রিজ ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওই ওষুধগুলি ফ্রিজের ঠান্ডা ছাড়া মাত্র ২-৩ ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে। ফলে সব ওষুধ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ওই ঘরেই ছিল একাধিক জীবনদায়ী ওষুধ (Life Saving Drug)। সব কিছু নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই চত্বর জুড়ে কোথাও ফ্যান ভেঙে ফেলা হয়েছে, কোথাও দরজার কব্জা খুলে ফেলা হয়েছিল। ভেঙে ফেলা হয়েছে বোর্ড। বেছে বেছে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে। যেখানে যা যন্ত্র পেয়েছে সব ভেঙেছে দুষ্কৃতীরা। চিকিৎসক-নার্সদের অভিযোগ গোটা হামলার সময়ে কার্যত নির্বাক দর্শক ছিল পুলিশ।
এরই মধ্যে এমআরআই-সিটি স্ক্যানের ঘর বেঁচে যায়। শাটার নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সেখানে যন্ত্রপাতিগুলি বেঁচে গিয়েছে। যাঁরা কর্মী ছিলেন, তাঁরা গোলমাল শুনেই দ্রুত শাটার নামিয়ে আলো বন্ধ করে দেন। আক্রমণ সেখানেও হয়েছিল। কারণ সামনের বোর্ডে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। মনে করা হচ্ছে যারা হামলা চালিয়েছে তারা জানত আর জি কর হাসপাতালে কোন বিভাগ কোথায় রয়েছে? সেই কারণেই এত অল্প সময়ে পরপর বিভাগে হামলা? হামলাকারীদের হাতে রড-হাতুড়ি-ইট ছিল। দেখা গিয়েছে বাঁশ।
এখন এমারজেন্সি চালু রাখা যাবে না। কিন্তু যাতে পরিষেবা বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য ট্রমা কেয়ার ফেসিলিটিতে জেনারেল এমারজেন্সির রোগীদের এনে চিকিৎসা পরিষেবা চালু রাখার চেষ্টা করা হবে বলে জানালেন আর জি করের অধ্যক্ষ।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।