কলকাতা: আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের উপর নারকীয় অত্যাচার এবং খুনের প্রতিবাদে একযোগে সরব রাজ্যবাসী। মেয়েদের নিরাপত্তার দাবিতে স্বাধীনতার মধ্য়রাতে রাস্তায় ঢল নামল মানুষের। আর সেই মিছিল চলাকালীনই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল আর জি কর চত্বর। পুলিশের সামনেই ব্যারিকেড ভেঙে ভাঙচুর চালানো হল হাসপাতালে। প্রতিবাদ থেকে নজর ঘোরাতেই কি ময়দানে নামানো হল দুষ্কৃতীদের, উঠছে প্রশ্ন। পাশাপাশি, শুরুতেই কেন ভাঙচুর আটকাল না পুলিশ, সেই প্রশ্নও  উঠছে। (RG Kar Hospital Ransack)


শহরের রাস্তায় মিছিল চলাকালীন আর জি করে এই হামলার ঘটনায় ন'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন মানিকতলার ওসি, ডিসি নর্থ। সবমিলিয়ে ১৫ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশের সামনে এই হামলা চলল কী করে, হামলাকালীরা কী উদ্দেশ্য নিয়ে চড়াও হয়েছিল, উঠছে প্রশ্ন। কারণ পুলিশের সামনেই ব্যারিকেড ভেঙে তাণ্ডব চালাতে দেখা যায় হামলাকারীদের। (RG Kar News)


আর জি করের আবাসিক পড়ুয়া চিকিৎসকরা জানান, ভিড় এসে চড়াও হয় হাসপাতালে। তাঁদের উপর হামলা চালানো হয়। প্রমাণপত্র লোপাটের লক্ষ্য নিয়েই ভিড় চড়াও হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তাঁরা। কোনও পদক্ষেপ করা তো দূর, বরং পুলিশ নিজের পিঠ বাঁচাতেই ব্যস্ত ছিল বলে অভিযোগ করেছেন পড়ুয়ারা। পুলিশ পালিয়ে বাঁচে বলে দাবি করেন তাঁরা। নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর আর্জিও জানানো হয়।


আরও পড়ুন: RG Kar Medical Student Death: 'এক মেয়েকে হারিয়েছি, পাশে পেয়েছি কোটি কোটি মেয়েকে', 'মেয়েদের রাত দখল' নিয়ে নির্যাতিতার বাবা


বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে পৌঁছে দেখা যায়, এমার্জেন্সি ওয়ার্ডের প্রবেশ পথে দু'টি কোলাপসিবল গেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। হামলাকারীরা দানবীয় আক্রমণে গেট বেঙে দেন বলে জানা গিয়েছে। এমার্জেন্সি ওয়ার্ডের শুরুতেই HDU ওয়ার্ড রয়েছে। পর পর শয্যা রয়েছে সেখানে। জীবনদায়ী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে, যার উপর তাণ্ডব চালানো হয়। HDU ওয়ার্ডের দেওয়ালে যে ঘড়ি রয়েছে, ১২-৩৭ মিনিটে সেই ঘড়িকে থেমে থাকতে দেখা যায়। অর্থাৎ ওই সময়ই হামলা ঘটে। 


হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, "হামলা চালাতে দেখে ভিতরে ঢুকে যাই আমরা। ১০০ থেকে ১৫০ জন হামলা চালায়। নইলে এই দরজাগুলি ভাঙতে পারে! ওরাও বলছে জাস্টিস চাই, আর ভাঙছে। হাতুড়ি, লোহার রড নিয়ে হামলা চালানো। আমরা ভিতরে পালিয়ে যাই। তার পর সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাই। আমাদেরও আগে পুলিশ পালিয়ে যায়। হামলার সময় ৫-৬ জন পুলিশ ছিলেন। তাঁরাও বাঁচতে পালিয়ে যান। সিঁড়ি টপকে টপকে ছ'তলায় উঠে যাই আমরা।"


ঘটনাস্থল থেকে যে ছবি উঠে আসে, তাতে রাস্তার ধারে গাড়ি-স্কুটার পর্যন্ত উল্টে থাকতে দেখা যায়। প্রায় ৩০-৩২ জন হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ। চিকিৎসকদের আন্দোলন মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়। মারধর করা হয় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের। তার পর বিতরে ঢুকে চলে ভাঙচুর। এই মুহূর্তে তছনছ অবস্থা আর জি কর হাসপাতালের। ট্রলি, শয্যা, টেবিল, চেয়ার, কিছুই প্রায় আস্ত নেই। তথ্য প্রমাণ নষ্ট করতেই পরিকল্পিত ভাবে এই হামলা চালানো হয় কি না, উঠছে প্রশ্ন।