অভিজিৎ সরকার ও হিন্দোল দে, কলকাতা : রাস্তায় থেকে থেকে কোথাও পড়ে রয়েছে কাঁচের টুকরো, পোড়া দাগ। দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও টাটকা। তবে, পথ দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর পরের দিন অনেকটাই বদলে গেল বেহালা চৌরাস্তার ছবি। যে ডায়মন্ড হারবার রোডে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, আজ সেই রোডের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পথচারীদের রাস্তা পারাপার, যান চলাচল ব্যবস্থার তদারকি করছেন ডায়মন্ড হারবারে ওসি(ট্রাফিক) অমলেন্দু চক্রবর্তী। 


রাস্তার প্রত্যেক জায়গায় পুলিশ-প্রহরা রয়েছে। রাস্তার পেরনোর জন্য যেসব জায়গা সেখানে একাধিক ড্রপগেট বসানো হয়েছে। পুলিশকর্মীরা কাজ করছেন। ব্যারিকেড দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, যেখান সেখান থেকে রাস্তা পেরনো যাবে না। জেব্রা ক্রসিং ধরে যাতে পথচারীরা রাস্তা পেরোন তা নিশ্চিত করছে পুলিশ। বাস বা অটোয় ওঠার জন্য নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়াচ্ছেন যাত্রীরা। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, 'আগে থাকত না, আজ সত্যিই বেশি পুলিশ রয়েছে। খুবজোর একটা দেখা যেত আগে ! নয়তো দেখাই যেত না।'


এই এলাকার আশপাশে একাধিক স্কুল আছে। যেখানে পড়ুয়াদের নিয়ে সকালের দিকে যাতায়াত করেন অভিভাবকরা। ব্যস্ততম একটা রাস্তা, যেখানে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকেই থাকে। এক অভিভাবক বলেন, 'আমার সন্তানও ক্লাস টুয়ে পড়ে। একটু তো ভয় ভয় লাগে। এরকম তো আগে কখনো দেখিনি।' স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাবরের অভিযোগ, এখানে রাস্তা পারাপারের নিয়ম ঠিকমতো মানা হয় না। তাই দুর্ঘটনার পর তার রোষ গিয়ে পড়ে পুলিশের উপর।


কিন্তু, দুর্ঘটনার পর আজ পুলিশের ব্যাপক নজরদারি-পাহারা রয়েছে। বেড়েছে পুলিশি তৎপরতাও। ডায়মন্ড হারবার ওসি ( ট্রাফিক) অমলেন্দু চক্রবর্তী জানান, 'পাঁচটা ড্রপগেট আনা হয়েছে। তারমধ্যে দুটো বসানো হয়েছে। আর তিনটে আজই বসিয়ে দেওয়া হবে। যথেষ্ট বাহিনী রাখা হয়েছে। মানুষকে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে ড্রপগেট বসানো থাকবে।' যদিও পথচারীদের একাংশ বা স্কুল পড়ুয়াদের অভিভাবকরা অবশ্য কতদিন এই ব্যবস্থা থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।


গতকাল কী ঘটে ?


বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার পথেই শেষ হয়ে গেল সারাজীবনের পথচলা। বেপরোয়া লরি কেড়ে নিল সাত বছরের একরত্তির প্রাণ! আর শুক্রবার সকালে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বেহালার চৌরাস্তা। ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে ৬টা। বাবার সঙ্গে পরীক্ষা দিতে আসছিল, বড়িশা হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া সৌরনীল সরকার। প্রত্য়ক্ষদর্শীদের দাবি, অটো থেকে নেমে, সিগনাল দেখেই রাস্তা পেরোচ্ছিল বাবা-ছেলে। হঠাৎ, বেপরোয়া গতিতে আসা এই লরি তাদের ধাক্কা দিয়ে সৌরনীলের মাথা ও তার বাবার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। লরির চাকায় পিষে, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৭ বছরের একরত্তির।