কলকাতা: সল্টলেকের সুকান্তনগরে ধৃত মাদক কারবারি দম্পতির দুটি বিলাসবহুল গাড়ি থেকে এবার কয়েক কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করল রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। একটি বড় প্যাকেটে ৫০০ গ্রাম হেরোইন ছাড়াও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি ছোট প্যাকেট। যার মধ্যে হেরোইন ছিল। মাদক কারবারি দম্পতি মোমিন খান ও মেহতাব বিবি সুকান্তনগরের আবাসনে পাঁচতলার ফ্ল্যাটে এসি ঘরে ছাগলের খোঁয়াড়ের আড়ালে মাদক তৈরির কারবার চালাত। ১৬ মার্চ ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। এবার তাদের বিলাসবহুল গাড়িতেও লুকোনো মাদকের সন্ধান মিলল।


মাদকের পাশাপাশি  অস্ত্র উদ্ধারের রমরমা: ভোটের আগে রাজ্যে মুড়ি-মুড়কির মতো অস্ত্র উদ্ধারের (Fire Arms Rescue)  ঘটনা চিন্তা বাড়াচ্ছে পুলিশের। শুধু মুঙ্গের নয়, বিহারের ছোটখাটো জায়গাতেও তৈরি হচ্ছে বেআইনি অস্ত্র। সেই সব অস্ত্র পাচার হচ্ছে বাংলায়। এবার বাংলা-বিহার সীমানায় মিলল বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিশ।


গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বিহার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল মালদার রতুয়া সীমানায় কাটিহারের আমদাবাদ এলাকায় অভিযান চালায় রাজ্য় পুলিশের এসটিএফ। বেআইনি অস্ত্র কারখানার মালিক নারু কর্মকারের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ২টি আগ্নেয়াস্ত্র, একটি অসম্পূর্ণ ব্যারেল, একটি অসম্পূর্ণ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির নানা সরঞ্জাম। অস্ত্র কারখানার মালিক পলাতক। 


সম্প্রতি বাংলার বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। গত বৃহস্পতিবার ক্যানিংয়ে এক অস্ত্র কারবারির হদিশ মেলে। প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার করে বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ। এই সব অস্ত্র বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি, বিহারের খাগাড়িয়া ও সমস্তিপুরে অভিযান চালিয়ে প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। কিন্তু এত আগ্নেয়াস্ত্র আসছে কোথা থেকে ? বারবার উঠছে প্রশ্ন। আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় গতবছর হরিদেবপুরকাণ্ডে ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, 'অস্ত্র আসছে বিহার, ঝাড়খন্ড, উত্তরপ্রদেশ থেকে।' 


খালিস্তানপন্থী, বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা অমৃতপাল সিংহ (amritpal singh) ও তার সাত সহযোগীর (aides) বিরুদ্ধে আইনি কড়াকড়ি আরও জোরাল করছে কেন্দ্র। সূত্রের খবর, তাদের বিরুদ্ধে বেআইনি অস্ত্র (Illegal Possession Of Arms Act) আইনে মামলা দায়ের করে তদন্ত করতে চলেছে ন্য়াশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ (NIA)। অভিযুক্তদের তালিকায় পয়লা নম্বর অবশ্যই অমৃতপাল। সব মিলিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ও তার সাত সমর্থকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের মামলার আইনি বিষয়টি আঁটসাঁট করতে চাইছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।


যা ঘটল...
এর মধ্যে অমৃতপালের চার সাগরেদকে গ্রেফতার করে অসমের ডিব্রুগড়ে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা। তাদের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা এনএসএ-তে মামলাও দায়ের করা হয়েছে বলে খবর। তবে এই গোটা অভিযানটিই গোপনে হয়েছে। আম আদমি পার্টি বা আপ শাসিত পঞ্জাব সরকার, বিজেপি শাসিত অসম এবং কেন্দ্রে সমন্বয়ে গোটা অভিযান পরিচালিত হয়। ভারতীয় বায়ুসেনার একটি বিমান ব্যবহার করা হয়েছিল এই রুদ্ধশ্বাস অভিযানে। সেটি করেই ওই চার জনকে অসমে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে খবর। যদিও এই নিয়ে কেন্দ্র, অসম বা পঞ্জাবের সরকার, প্রত্যেকেই মুখে কুলুপ এঁটেছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা গত কাল শুধু বলেন, 'দুই পুলিশের সমন্বয়েই এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।' যদিও সূত্রের খবর, গত ২ মার্চ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকেই এই অভিযানের খুঁটিনাটি আলোচনা করে নিয়েছিলেন পঞ্জাবের আপ মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিংহ মান।'


যা ঘটেছে...
শয়ে শয়ে পুলিশ,আধা সেনা মোতায়েন। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা, চূড়ান্ত তৎপরতা। তার পর দীর্ঘ পথ ধাওয়া সশস্ত্র পুলিশের। তার পরও পঞ্জাবের খালিস্তানপন্থী, বিচ্ছিন্নতাকামী অমৃতপাল সিংহ অধরাই। প্রথমে জানা যায়, ধাওয়া করে তাঁকে একটি বাড়িতে গিয়ে ফেলা গিয়েছে। তার পর জানা যায়, পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। কিন্তু পরে জানা যায়, অমৃতপালের ছয় সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু কনভয় থামিয়ে যেই না অমৃতপালকে গ্রেফতার করতে যায় সশস্ত্র পুলিশ, তাদের হাত ছাড়িয়ে গাড়িতে চেপে  চম্পট দেন অমৃতপাল। এই মুহূর্তে পুলিশের খাতায় ফেরার তিনি। অমৃতপালকে ঘিরে শনিবার দিনভর থমথমে পরিবেশ ছিল পঞ্জাবে।  জলন্ধরের শাহকোট তেহসিলের উদ্দেশে গাড়িতে চেপে রওনা দিয়েছিলেন অমৃতপাল। সেই অবস্থায় তাঁকে ধাওয়া করে পুলিশ। প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শেষ মেশ মেহতপুরে এনে ফেলা হয় অমৃতপালকে। গোটা গ্রাম ঘিরে ফেলে পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয় শাহকোটমুখী সব রাস্তা। তার পর অমৃতপালের সহযোগীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে প্রচুর বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলে খবর। কিন্তু একটি গাড়ি বাগিয়ে অমৃতপাল পুলিশের হাত ফস্কে চম্পট দিতে সফল হয় বলে জানা যায়।