ময়ুখঠাকুর চক্রবর্তী ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, শিবাশিস মৌলিক: গত কয়েকদিন ধরেই তাঁকে নিয়ে তোলপাড় রাজ্য়। অবশেষে প্রথমবার ক্য়ামেরার সামনে এলেন গোপাল দলপতি এবং তাপস মণ্ডল বর্ণিত 'কালীঘাটের কাকু'। এবিপি আনন্দকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বেহালার বাসিন্দা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (Sujaykrishna Bhadra) বললেন, আমার সাহেব, অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Abhishek Banerjee)। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
এবিপি আনন্দকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি 'কালীঘাটের কাকু'
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সম্প্রতি একাধিক ব্যক্তির মুখে উঠে এসেছে 'কালীঘাটের কাকু'র কথা। তাঁর নাম ঘিরেই তোলপাড় হচ্ছে রাজ্য রাজনীতি। কে এই 'কালীঘাটের কাকু'? কতটা প্রভাবশালী তিনি? বুধবার সেই 'কালীঘাটের কাকু'র কাছে পৌঁছে গেল এবিপি আনন্দ। আর ক্যামেরার মুখোমুখি হয়েই বিস্ফোরক তিনি।
সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের দাবি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত পৌঁছনোর চেষ্টা হচ্ছে। আর সেটা করতে গিয়ে তাঁর পর্যন্ত এসে থেমে যেতে হচ্ছে। সুজয়কৃষ্ণ বলেন, "আমার যে সাহেব, পৃথিবীর কারও ক্ষমতা নেই তাঁকে ছোঁবে। কারণ তাঁর নাম কেউ করতে পারবে না। তাঁর সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারবে না। তাঁর সঙ্গে কেউ ফোনে কথা বলতে পারবে না। সেই অবধি কোনও লোক পৌঁছতে পারবে না। তাই চেষ্টা করা হচ্ছে, আপনারা ভাল বুঝবেন, সেই করতে গিয়ে আমি অবধি এসে থেকে যেতে হচ্ছে।"
বেহালার বাসিন্দা সুজয়কৃষ্ণের দাবি, তাঁর কর্মস্থল নিউ আলিপুর। দীর্ঘদিন ধরে অভিষেকের অভিষেকে চাকরি করেন। কী কাজ করেন সুজয়কৃষ্ণ? খোলসা না করলেও, ২০০৯ সাল থেকে তিনি অভিষেকের অফিসে রয়েছেন বলে জানান। শুধু চাকরিই করেন, প্রোমোটিং বা কোনও ব্যবসা নেই বলে দাবি করেন।
আরও পড়ুন: Dhaniram Toto : ডুয়ার্সের বিভিন্ন জনজাতির ভাষা সংরক্ষণের দাবি পদ্মশ্রী ধনীরাম টোটোর
কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় 'কালীঘাটের কাকু'র নাম জড়াচ্ছে কেন? কেন তাপস মণ্ডলের মতো নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত এবং অভিযুক্ত গোপাল দলপতিদের মুখে 'কালীঘাটের কাকু'র নাম? নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কি কোনও রকম ভূমিকা রয়েছে তাঁর? সুজয়কৃষ্ণের বক্তব্য, "আমার নিজের দাদার মেয়ে, তার একটা চাকরি করে দিতে পারিনি। আমি যদি এতই প্রভাবশালী হতাম, তাহলে দাদার মেয়ের একটা চাকরি করে দিতে পারতাম না! নিজের মেয়ের একটা চাকরি করে দিতে পারতাম!"
যদিও সুজয়কৃষ্ণর সূত্র ধরেই অভিষেককে নিশানা করতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, "কালীঘাটের কাকি সম্পর্কে আমাদের কাছে যা তথ্য উঠে আসছে, ২০০৯ সাল থেকে ইনি...কোম্পানিতে যুক্ত ছিলেন। সেখানে অমিত, লতা, রুজিরা যুক্ত। কালীঘাটের কাকু হচ্ছে কান। এ বার কানে হাত পড়েছে যখন, মাথা টানতে আর বেশি দেরি নেই।"
সুজয়কৃষ্ণর সূত্র ধরেই অভিষেককে নিশানা করতে শুরু করেছেন বিরোধীরা
তবে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "কেউ যে কাও সঙ্গে কাজ করতে পারো। কিন্তু তার মানে যে ও দোষী, অভিযুক্ত, এমন মনে করার কারণ নেই। ওর মেয়েই তো চাকরি পায়নি! অভিষেকের অফিসে কাজ করাটা দোষের হতে পারে না। যারা এসব নাম ভাসাচ্ছে, তারা বলুক দিলীপ ঘোষকে কেন অ্যারেস্ট করা হবে নাা। ওরও দলিল পাওয়া গিয়েছে।" কিন্তু এই তরজার মধ্যে কার ঝুলিতে কী লুকিয়ে রয়েছে, আর শেষ অবধি কী বেরোবে, সেটাই দেখার।