কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, রুমা পাল, কলকাতা : একজন বিরোধী দলনেতা, অপরজন প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা।  দুপক্ষই রাজ্য়ে বিরোধী দল। কিন্তু কেন্দ্রে যুযুধান শিবির!  তাঁদেরই একজনের মুখে আরেকজনের স্তূতি! তবে কি বদলাচ্ছে রাজনীতির রং? বদল হচ্ছে সমীকরণ?


ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (mamata Banerjee) সঙ্গে সনিয়া ও রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) একসঙ্গে আসার পর থেকেই, দলের সঙ্গে কার্যত সংঘাতে জড়িয়েছেন কৌস্তভ বাগচী। আর এই আবহেই তাঁর মুখে শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসা ঘিরে জল্পনা জোরাল। আর শুধু বর্তমান বিরোধী দলনেতার প্রশংসাই নয়, তা করতে গিয়ে নিজের দলেরই বর্ষীয়ান নেতা ও প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকেও কার্যত খোঁচা দিয়েছন কৌস্তভ। (Kaustav Bagchi) 


'বিরোধী দলনেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা নিঃসন্দেহে খুব ভাল '


কৌস্তভ বাগচী বলেছেন, '২০১৬ সাল থেকে তো আমরা বিরোধী দলনেতার মর্যাদা পেয়েছিলাম, একজন বিরোধী দলনেতা ছিল। লোকজন জানতই না। এখন লোকজন জানে, পশ্চিমবঙ্গে একটা বিরোধী দলনেতা বলে বস্তু আছে, তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে ভোকাল হতে দেখা যায়। তাঁর যে পারফরমেন্স, সেটাকে কোনওভাবে ছোট করে দেখতে পারবে না। ....বিরোধী দলনেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা নিঃসন্দেহে খুব ভাল। অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই।'


নিজের শ্রী বৃদ্ধির কথা না ভেবে লড়াই করছেন : কৌস্তভ প্রসঙ্গে শুভেন্দু 


বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ' গত ১ বছর ধরেই বলেছি, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক বাধ্য়বাধকতার বাইরে যে কয়েকজন পিসি ভাইপো পরিবারের হাত থেকে বাংলাকে পরিত্রাণ দিতে চাইছেন, তাদের মধ্য়ে কৌস্তভের ভূমিকা আছে। বিন্দু বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়। রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে নিজের শ্রী বৃদ্ধির কথা না ভেবে লড়াই করছেন। শিক্ষিত সংবেদনশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব যারা সামনে এসেছেন, যারা সিনিয়র লিডারে দর্শনের বাইরে গিয়ে অত্য়াচারের হাত থেকে লড়াই করছে, তাদের মধ্য়ে কৌস্তভ অন্য়তম। ' 


আমার তো কোনও ছুঁৎমার্গ নেই : কৌস্তভ


চলতি বছরের তেসরা মার্চ গভীর রাতে কৌস্তভের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। পরদিন, অর্থাৎ, চৌঠা মার্চ কৌস্তভকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিনই হাইকোর্টে জামিন পান কংগ্রেস নেতা। হাইকোর্ট চত্বরেই মাথা কামিয়ে ফেলেন তিনি। সেই থেকে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁর উদ্দেশ্য় একটাই, তৃণমূলকে উৎখাত করা। প্রয়োজনে শুভেন্দুর সঙ্গে একমঞ্চে যেতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা। তিনি বলেন, ' এই রাজ্য়ে তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করা মানে কংগ্রেস নিজের সুইসাইড করা।'  কৌস্তভ আরও বলেন, ' আমার তো কোনও ছুঁৎমার্গ নেই। এর আগে DA মঞ্চে একসঙ্গে, আমি বক্তৃতা দিয়েছি, তারপর শুভেন্দু অধিকারী এসেছে। যেখানে রাজ্য়ে তৃণমূলকে উৎখাত করা প্রাইমারি অ্য়াজেন্ডা...' 


বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ' ১১ সালে যেমন অল্টারনেট ছিল তৃণমূল। এখন বিজেপি ছাড়া কোনও অল্টারনেটিভ নেই। I.N.D.I.A তিনটে মিটিং-এ যেভাবে হাত ধরেছে, তাতে বিশ্বাসযোগ্য়তা নষ্ট হয়েছে। যোগ বিয়োগের খাতিরে সামান্য় ভোটে জিততে পারেনি বিজেপি। ওয়েস্ট বেঙ্গল পলিটিকসে এদেরকে সরাতে হলে বিজেপির সঙ্গে আসতে হবে আগামী বিধানসভা বা লোকসভায়।' 


কৌস্তভের এই মন্তব্য় ঘিরে এখন জোর জল্পনা। তবে কি নতুন কোনও রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে? প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ মহলে।