হিন্দোল দে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা : কুলতলির পয়তারহাট গ্রামে বসেই দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নকল সোনার কারবার চালাচ্ছিল প্রতারক সাদ্দাম সর্দার, তার ভাই সায়রুল-সহ গোটা পরিবার। কিন্তু শুধুই কি সোনা পাচার ? নাকি তলায় তলায় চলত দুর্নীতির এক বিরাট চক্র ? উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য । পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে জাল টাকার ব্যবসার আশঙ্কার কথাও। পুলিশ সূত্রে খবর, নকল সোনা বিক্রির পাশাপাশি, জাল নোট চক্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিল সাদ্দামরা।

  


আস্তে আস্তে পরতে পরতে খুলছে রহস্যের জাল। একা সাদ্দামের পরিবারই নয়, কুলতলির পয়তারহাট গ্রাম হয়ে উঠেছিল নকল সোনার কারবারিদের মুক্তাঞ্চল। পুলিশ সূত্রে খবর, ত্রিভুজাকৃতি এই গ্যাংয়ের মাথায় ছিল ২ জন। সাদ্দাম, তার ভাই সায়রুল ও তাদের এক পার্টনার অপর একজনকে সামনে রেখে প্রতারণার কারবার চালাত । এরাই টোপ দিয়ে শিকার ধরত। এদের নীচে ছিল আরও ৩ জন। এর নীচেও আরও ১৫-২০ জন ছিল। পুলিশের দাবি, মহিলাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গোটা অপারেশন চালাত এই গ্যাং। পয়তারহাট গ্রামে পুলিশি অভিযানের পর গোটা গ্যাং-ই পলাতক। 


কী করে শিকার ধরত তারা ? জানা গিয়েছে, বিভিন্ন মূর্তিতে সোনার কোটিং দিয়ে সেটাকেই সোনা বলে চালানো হত।  চড়া দামে বিক্রি করা হত ক্রেতাদের। বিভিন্নভাবে ক্রেতাদের টোপ দিয়ে পয়তারহাট গ্রামে আনা হত। আর এই গোটা গ্রামটাই তো চোরা কারবারিদের ডেরা। অর্থাৎ চক্রব্যূহে ঢুকে গেলে আর বেরোবার পথ নেই। একেবারে সর্বস্ব খুইয়েই বের হতে হত।  নিজেদের ডেরায় ডেকে এনে মারধর করে টাকা লুঠ করত সাদ্দাম ও তার দলবল। তারপর পালাত সুড়ঙ্গ দিয়ে। 


খাটের নিচেই তাই কাটা হয়েছিল সুড়ঙ্গ। যাতে লোকচক্ষুর আড়াল দিয়েই বেরিয়ে যাওয়া যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, ১৫ বছর ধরে নকল সোনার মূর্তির কারবারে হাত পাকিয়ে ফেলেছিল তারা। ক্রেতাদের টোপ দিয়ে কুলতলির ডেরায় ডেকে মারধর করে টাকা লুঠ করায় সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছিল এই পরিবার। ছিল জাল নোটের কারবারও। অর্থাৎ স্তরে স্তরে অপরাধ। টিম সাদ্দামের কুকীর্তির একের পর এক পর্দাফাঁস হয়ে চলেছে। গ্রেফতারের পর এই সব তথ্য  স্বীকার করেছেন সাদ্দাম ও সায়রুলের স্ত্রীই। সব মিলিয়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কুলতলিতে সোনা-প্রতারণার তদন্তে গিয়ে কার্যত চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা হল পুলিশের।  


আরও পড়ুন :


সুড়ঙ্গের অন্ধকারের শেষ কোথায় ? কুলতলিতে সোনা পাচারের বিরাট রহস্য?