সুকান্ত দাস, হিন্দোল দে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা :  কুলতলিতে পরতে পরতে ঢাকা রহস্য। পেঁয়াজের খোলার মতো খুলছে একেকটি পরত। শোওয়ার ঘরে খাটের নীচে সুড়ঙ্গ-পথ ! এ যেন সিনেমাকেও হার মানায় ! কুলতলির পয়তারহাট গ্রামে বসেই দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নকল সোনার কারবার চালাচ্ছিল প্রতারক সাদ্দাম সর্দার, তার ভাই সায়রুল-সহ গোটা পরিবার। পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। 


পুরনো সোনা কম দামে বিক্রির নামে ১২ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে সাদ্দাম সর্দার নামে এক ব্য়ক্তির বিরুদ্ধে। কুলতলি থানার পয়তারহাট এলাকায় সোমবার এই ঘটনার তদন্তে গিয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে।  সুড়ঙ্গের হদিশ পেয়েছে পুলিশ। সেই সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরিয়েই খাল হয়ে পালাত সাদ্দাম। সোমবার সকালে তাঁর বাড়িতে যায় পুলিশ। বারুইপুর পুলিশ জেলার SP জানিয়েছেন, অভিযুক্তকে ধরতে গেলে তাঁর বাড়ির লোকজন ও গ্রামের বেশকয়েকজন বাসিন্দা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। যারা নিজেরাও নকল সোনার কারবারের সঙ্গে জড়িত বলে অনুমান। প্রায় শতাধিক লোক পুলিশকে ঘিরে ধরে। এরপর পুলিশ যখন অভিযুক্তকে ধরে নিয়ে আসার চেষ্টা করে, ঠিক তখনই হামলা চালানো হয়। পুলিশের বক্তব্য়, অভিযুক্তের ভাই সাইরুল সর্দার এক পুলিশ অফিসারের গায়ে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে, দাদাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।  তখন দুজনকে ধাওয়া করে পুলিশ। দুই অভিযুক্ত পুলিশকে লক্ষ্য় করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়! ঠিক যেন সিনেমার দৃশ্য !


এই সুড়ঙ্গের শেষ কোথায় ? এই সুড়ঙ্গের শেষে আছে এক খাল, যে খালা সোজাসুজি শেষে মাতলা নদীতে। বিপদ বুঝলে এই পথ দিয়ে পালাত তারা। কিন্তু কীভাবে চলত তাদের ব্যবসা ?  আর সুড়ঙ্গটাই বা কোন কাজে লাগত? শুধুই পালাতে ? তদন্ত করতে নেমে ভয়ঙ্কর তথ্য পেল পুলিশ। 


পুলিশের দাবি, গ্রেফতারের পর জেরায়  সাদ্দাম ও সায়রুলের স্ত্রী  নাকি শেয়ার করেছেন চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য।  পুলিশ সূত্রে খবর, বিভিন্ন মূর্তিতে সোনার কোটিং দিয়ে সেটাকেই সোনা বলে চড়া দামে বিক্রি করা হত। ক্রেতাদের টোপ দিয়ে পয়তারহাট গ্রামে নিজেদের ডেরায় ডেকে এনে মারধর করে টাকা লুঠ করত সাদ্দাম ও তার দলবল। অর্থাৎ ভুয়ো সোনার মূর্তির টোপ দিয়ে নিজেদের ডেরায় ডেকে গুপ্ত-আক্রমণ চালাত। তারপর সর্বস্ব লুঠ করে সুড়ঙ্গ পথেই পালাত তারা। 


সাদ্দামের শোওয়ার ঘরে খাটের নীচে সুড়ঙ্গ-পথ ধরে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। প্রশ্ন উঠছে, সুড়ঙ্গ-পথ কি শুধুই পালানোর জন্য? নাকি, এই পথে খাল দিয়ে লুঠের মাল বা বেআইনি সামগ্রী পাচার করত প্রতারকরা? পুলিশ সূত্রে খবর, নকল সোনা বিক্রির পাশাপাশি, জাল নোট চক্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিল সাদ্দামরা। আর গ্রামবাসীরা ? তারা কেন সাদ্দামদের ধরতে গেলে আটকাচ্ছিল ? তবে কি তারাও যুক্ত এই বিরাট বেআইনি - চক্রে ? খুব শিগগিরি সে-সবও জানা যাবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারী অফিসাররা।