পার্থপ্রতিম ঘোষ, রঞ্জিত সাউ, সত্যজিৎ বৈদ্য, কলকাতা : কখনও লস্কর-ই তৈবা তো কখনও ISIS। বাংলায় কেন সক্রিয় জঙ্গি কার্যকলাপ? এরাজ্যকে কি নিরাপদ মনে করছে তারা? এই নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। তবে এর পিছনে নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন প্রাক্তন আইবি ও সেনাকর্তারা।
আল কায়দা, লস্কর-ই তৈবা, ইসলামিক স্টেট, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, জামাত-উল মুজাহিদিন বাংলাদেশ কিংবা আনসারুল বাংলা, গত দু-দশকে বঙ্গের মাটিতে এই সমস্ত জঙ্গি সংগঠনের উপস্থিতি বারবার সামনে এসেছে। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন হাওড়ায় দুই সন্দেহভাজন ISIS জঙ্গির গ্রেফতারির ঘটনা। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এই রাজ্যকে সেফ প্যাসেজ বলে মনে করছে জঙ্গিরা?
প্রাক্তন সেনাকর্তা ব্রিগেডিয়ার দেবাশিস দাস মনে করছেন, এইভাবে জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত খুবই চিন্তার বিষয়। ২১ বছর আগে, ২০০২-এর ২২ জানুয়ারি, আমেরিকান সেন্টারে জঙ্গি হামলার ঘটনা কাঁপিয়ে দিয়েছিল কলকাতাকে! যে কাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজা খাটছে আফতাব আনসারি। একযুগ পরে, ২০১৪-র ২ অক্টোবর, অষ্টমীর সকালে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দু’জনের। প্রকাশ্যে আসে বাংলাদেশের ‘জামাত-উল-মুজাহিদিনে’র সক্রিয়তা! ২০১৬-র মার্চে ISIS-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আশিক আহমেদ নামে দুর্গাপুরের কাঁকসার বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রকে গ্রেফতার করে NIA। ২০২০-র মার্চে লস্কর-ই তৈবা যোগসূত্রে, উত্তর চব্বিশ পরগনার বাদুড়িয়া থেকে তানিয়া পরভিন নামে আরেক কলেজ ছাত্রীকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। এরপর কখনও বর্ধমান, কখনও হাওড়ার বাঁকড়া, কখনও উত্তর ২৪ পরগনার শাসন, তো কখনও দক্ষিণ ২৪ ডায়মন্ডহারবার থেকে বিভিন্ন জঙ্গি মডিউলের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আর এবার ফের এসটিএফের জালে ধরা পড়ল সন্দেহভাজন ২ ISIS জঙ্গি ।
এরপরই রাজ্যের শাসকদলের উদ্দেশে অভিযোগের আঙুল তুলছে বিরোধী দলগুলি। তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপি নেতা রাহুল সিন্হা বলেন, এটা তো জঙ্গিদের হাব হয়ে গেছে, জানে এটা ওদের করিডর, ওরা তো মিটিং করতে এসেছি, এরা তো ধরতেই চায়নি, সামনে পড়ে গেছে। বড় কিছু ঘটে যেতে পারত।
কটাক্ষের তির এসেছে বামেদের তরফেও। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলেছেন , ' বাংলাটা কি জঙ্গিদের জন্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ক্রমশ? যে কোনো সময় যে কোনো ব্যাপারে জঙ্গি যোগ কলকাতায় অথবা পশ্চিমবাংলায়।' বাংলার মন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ফিরহাদ হাকিমের পাল্টা দাবি , বাংলার পুলিশ এখানে ধরছে, অন্য জায়গায় কী হচ্ছে?
নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই, কলকাতার কাছে, ISIS জঙ্গি সন্দেহে ২ যুবকের ধরা পড়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের।